স্টাফ রিপোর্টার : নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবির ময়মনসিংহ অফিসগুলো। বখশিশ ছাড়া মিলছে না কোন সেবা। অধস্তন কর্মকর্তা কর্মচারীদের ওপর ভেঙ্গে পড়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। ফলে সব কিছুতেই চলছে তুঘলকি কারবার।
একদিকে সরকারী বরাদ্দ অপচয় ও লুটপাটের মচ্ছব চলছে, অন্যদিকে চাহিদার বিদ্যুত সংযোগ পাচ্ছে না অনেক গ্রাহক। ঘন ঘন বিদ্যুত বিভ্রাটের সাথে দিনে রাতে একাধিকবার বিদ্যুতের আসা যাওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ ময়মনসিংহের গ্রাহকরা। পিডিবির স্থানীয় কর্তৃপক্ষের এমন অব্যবস্থাপনা দেখারও কেউ নেই!
স্থানীয় নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ত্রিশালের কাঠাল ফিডারের আওতায় আরইবির সীমানার ভেতর পাঁচ কিলোমিটার সরবরাহ লাইন নির্মাণ করা হয় মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে। আরইবির বাধার কারনে ত্রিশালের কাঠাল মহুরিয়া বাড়ি এলাকায় পিডিবির এই লাইন থেকে এখন পর্যন্ত কোন গ্রাহককে সংযোগ দিতে পারেননি। নাম প্রকাশ করা হবে না শর্তে আরইবির সূত্র জানায়, পিডিবির লাইন নির্মাণ ও সস্তা দামের বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার নামে তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
আরইবির স্থানীয় সূত্রের দাবি, পল্লী বিদ্যুতের আওতাভুক্ত এলাকায় পিডিবির সরবরাহ লাইন নির্মাণ ও সংযোগ দেয়ার রেওয়াজ নেই। এছাড়া প্রয়োজনীয় বরাদ্দের অভাবে পিডিবি কিংবা আরইবি যেখানে বিদ্যুতের সরবরাহ লাইন নির্মাণ করতে পারছে না, সেখানে দ্বৈত সংস্থার সরবরাহ লাইন নির্মাণ সরকারী অর্থেও অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয় বলে জানায় স্থানীয় সূত্র।
সূত্রগুলো আরও জানায়, নব গঠিত সিটি কর্পোরেশনের চায়না মোড়ে বেসরকারী আবাসিক এলাকা চায়না টাউনের ভেতর পিডিবির প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যুত সরবরাহ লাইন নির্মাণ করে। প্রচার রয়েছে, বেসরকারী এই বাণিজ্যিক প্লট মালিকদের কাছ থেকে তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে এই সুবিধা দেন। পিডিবির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের দাবি, বেসরকারী বাণিজ্যিক আবাসিক এলাকায় পিডিবির টাকায় এভাবে সরবরাহ লাইন করে দেয়ার নজীর নেই।
অভিযোগ রয়েছে ময়মনসিংহ বিদ্যুত বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৩ (শম্ভূগঞ্জ) এর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী নিজে লাভবান হয়ে বেসরকারী বাণিজ্যিক আবাসিক এলাকা চায়না টাউনের ভেতর সরবরাহ লাইন নির্মাণ কাজ করে দেন। খুঁটি পুতার পর বিষয়টি জানাজানি হলে ওই আবাসিক এলাকায় বিদ্যুতের তার টানানোর কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। একই সময়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের সীমানার ভেতর একটি বেসরকারী শিল্প কারখানায় ১০টি খুটি দিয়ে বিদ্যুত সরবরাহ দেন তৎকালীন এক নির্বাহী প্রকৌশলী। ফুলপুর উপজেলাতেও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই দুইটি রাইস মিলে এসটি সংযোগ দেয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এসব ব্যাপারে পিডিবির স্থানীয় কর্তৃপক্ষীয় সূত্র উচ্চ আদালতের নির্দেশে ঈশ্বরগঞ্জের বেসরকারী একটি শিল্প কারখানায় সংযোগ দেয়ার কথা স্বীকার করলেও বিস্ময় প্রকাশ করেন ফুলপুরের রাইস মিলে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া সংযোগ দেয়ার ব্যাপারে। বিদ্যুত বিভাগের অভিযোগ কেন্দ্রে প্রতিদিন গড়পড়তায় ৫০/৬০টি অভিযোগ আসছে। এসব অভিযোগ সমাধানে লাইনম্যানদের বখশিশ ছাড়া কোন কাজ হয়না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। শীতে বিদ্যুতের চাহিদা কমে গেলেও কমেনি ঘন ঘন বিদ্যুত বিভ্রাটের যন্ত্রণা। নগরীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা ছোট বাজার, বড় বাজার,দুর্গাবাড়ি রোড, সিকে ঘোষ রোড, ব্রাহ্মপল্লী ও বাঘমারাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন যখন তখন বিদ্যুতের আসা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। নগরীর মাসকান্দা বিসিক শিল্প নগরীতে প্রতিদিন পালা করে লোড শেডিং করার অভিযোগ রয়েছে।