নিজস্ব সংবাদদাতা : প্রতিবেশীর গোয়াল ঘরের অর্ধেক অংশে স্ত্রী আর তিন সন্তানসহ থাকেন কামরুল ইসলাম। ভূমিহীন কামরুলের ভাগ্যে এখনও জুটেনি সরকারি ঘর। ফলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে গোয়াল ঘরেই নিতান্ত কষ্টে দিন কাটে তার। কামরুল ইসলামের বাড়ি নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামে। থাকেন একই গ্রামের দক্ষিনপাড়ার খাইরুল মিয়ার গোয়াল ঘরে। ইতোমধ্যে বারহাট্টাকে ভূমিহীনমুক্ত উপজেলা ঘোষণা করার চিন্তা করছে প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসন বলছে, খাস জমির অভাবে তাদের ঘর দেওয়া যাচ্ছে না।

তবে প্রশাসনের এমন বক্তব্যের সাথে একমত নন এলাকাবাসী। তাদের দাবি, প্রশাসন আন্তরিক হলে খাস জমি খুঁজে পাওয়া কোন ব্যাপার না। মল্লিকপুর সেতু পার হয়ে বিলের পাশে প্রচুর খাস জমি রয়েছে। এগুলো এখন নদী খননের মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। এখানে ঘর করা সম্ভব। এছাড়াও আশেপাশে অনেক খাস জমি ও হালট আছে যেখানে ঘর করা সম্ভব। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা জুড়ে এখনো শত শত ভূমিহীন মানুষ রয়েছে, যারা অন্যর বাড়িতে থাকেন। তারা কোন সরকারি ঘর পাননি। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মুজিববর্ষে পুরো উপজেলায় তিন ধাপে একশোটি ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের জটিলতার কারণে জেলার দশ উপজেলার মধ্যে বারহাট্টায় সবচেয়ে কম ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

গোয়াল ঘরে বসবাসকারী কামরুল ইসলাম বলেন, আমি মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে নারিকেল গাছ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজ করি। আর আমার স্ত্রী সুখিলা মানুষের বাড়িতে কাজ করে। নিজের ঘর, জায়গা জমি কিছুই নাই। প্রতিবেশীর গোয়াল ঘরের মাঝখানে ভাঙা টিন দিয়ে বেড়া দিয়ে স্ত্রী, দুই মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে বসবাস করি। গোবরের গন্ধের মধ্যে ঘরে থাকা কষ্টকর। কিন্তু কোন উপায় না থাকায় এখানেই থাকতে হচ্ছে। সামান্য উপার্জন দিয়ে কোনরকম স্ত্রী সন্তান নিয়ে চলে যাচ্ছি। জমি কিনে ঘর কেনার সামর্থ নেই। একটা সরকারি ঘর পেলে ছেলে-মেয়ে বসবাস করতে পারতাম। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাসিম তালুকদার বলেন, এটি দুঃখজনক। এবার কামরুলের নাম তালিকায় দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এসএম মাজহারুল ইসলাম বলেন, ওখানে সুবিধা মতো খাস জমি পাওয়া যায় না। তাই ঘর দেওয়া সমস্যা হয়ে পড়েছে। অনেকে আবার নিজের এলাকা ছেড়ে দূরে যেতে চান না। এলাকায় তো অনেক ভূমিহীন রয়েছে, এত ভূমিহীন রেখে ভূমিহীনমুক্ত উপজেলা কিভাবে ঘোষণা করবেন এমন প্রশ্নের সরাসরি কোন উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, তারা ঘরের আবেদন করুক, পরে জায়গা খুঁজে তাদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।