অনলাইন ডেস্ক : বাজারে বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। অনেকেই আবার স্বাস্থ্যজনিত কারণে খেতে চান না তেল। তেল ছাড়া কি খাবার রান্না করা যায়?

এসব প্রশ্ন নিয়ে বিপাকে অনেকেই। তবে তেল ছাড়া যারা খাবার খেতে চান তাদের জন্য রয়েছে সুখবর। চাইলে তেল ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খাবার রান্না করতে পারবেন আপনি।

এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন রাঁধুনীর সঙ্গে কথা হয়। তাদের মতে, তেল ছাড়াও বিভিন্ন মাছ, মাংস, সবজি, ভর্তা, বেগুন ভাজা, ডাল সহ বিভিন্ন খাবার রান্না করা যায়। জেনে নিন তেল ছাড়া যেসব খাবার রান্না করা যায়, তার মধ্যে কিছু খাবারের রেসিপি।

* মাংস: খালি গরম পাত্রে প্রয়োজন মতো পেঁয়াজ বাটা, রসুনবাটা, আদাবাটা, জিরাবাটা দিয়ে নাড়তে থাকুন। মসলাগুলো শুকিয়ে আসতে শুরু করলে তাতে পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে নাড়তে থাকুন। কিছুক্ষণ পরে প্রয়োজন মতো দারুচিনি, তেজপাতা, এলাচ, লবণ, হলুদ ও মরিচের গুঁড়া দিয়ে নাড়তে থাকুন। মসলা শুকিয়ে আসতে শুরু করলে আবারও পানি দিয়ে নাড়তে থাকুন। মসলা কষানো হয়ে গেলে এর মধ্যে মুরগির মাংস দিয়ে নাড়ুন। কিছুক্ষণ পরে মাংসসহ পাত্রটি ঢেকে দিন। মাংস সেদ্ধ হয়ে এলে নামিয়ে ফেলুন।

* মাছ: প্রয়োজনমতো মাছ পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। এরপর একটি গরম প্যানে ব্লেন্ড করা মসলা ও এক কাপ পরিমাণ পানি দিয়ে নাড়তে থাকুন। তিন চার মিনিট ভালো করে জ¦াল হয়ে যাবার পর এতে কয়েকটা কাঁচামরিচ ও টমেটো কুচি দিন। ৩-৪ মিনিট নাড়ার পর এতে মাছ দিয়ে দিন। তারপর কিছুক্ষণ মিডিয়াম আঁচে রান্না করুন। তরকারি হয়ে এলে এতে কিছু ধনিয়া পাতা দিয়ে দিন। ১ মিনিট পর নামিয়ে ফেলুন।

* সবজি: গাজর, পেঁপে, ফুলকপি, শিম, টমেটো, গ্রিন ক্যাপসিকাম, মিষ্টি কুমড়া অথবা যেকোনো ধরনের সবজি। একটি প্যানে পরিমাণমতো পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। পানিতে তুলনামূলক শক্ত সবজিগুলো দিয়ে এতে লবণ দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। সবজিগুলো সেদ্ধ হয়ে এলে পানি ঝরিয়ে নিন। এরপর একটি শুকনো প্যানে পাঁচফোড়ন টেলে নিন। পাঁচফোড়নের ফ্লেভার আসা শুরু করলে এতে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভাজতে হবে। হালকা পানি দিয়ে নাড়তে হবে যেন মসলা পুড়ে না যায়। পেঁয়াজ বাদামী রঙের হয়ে এলে এতে আদাবাটা, রসুনবাটা দিয়ে একটু নাড়তে থাকুন। সামান্য পানি মিশিয়ে মসলা কষানো হলে এতে হলুদ গুঁড়া, ধনিয়া গুঁড়া, অল্প মরিচের গুঁড়া দিয়ে আরেকটু কষিয়ে নিবেন। এরপরে এতে কিছু টমেটো কুচি দিয়ে ঢাকনা দিয়ে দিতে হবে টমেটো সেদ্ধ হবার জন্য। টমেটো সেদ্ধ হয়ে এলে এতে সবজিগুলো দিয়ে দিতে দিন। একটু নেড়ে অল্প পরিমাণ পানি দিয়ে ঢেকে দিন। ৫-৬ মিনিট পরে সবজিগুলো সেদ্ধ হয়ে এলে তাতে কয়েকটি কাঁচামরিচ ও ধনিয়া পাতা দিয়ে হালকা জ¦াল দিয়ে নামিয়ে নিন।

* পটল ভাজা: প্রয়োজনমতো পটল ভালো করে ধুয়ে নিয়ে, খোসা চেছে নিন। এবার পটলগুলো লম্বাকারে দুই ভাগ করে কেটে নিতে হবে। হলুদ, মরিচের গুঁড়া, লবণ দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে নিন। এরপর একটি অ্যালুমিনিয়াম বা লোহার তাওয়া নিয়ে এতে পটলগুলো উল্টো দিকটা তাওয়ার ওপর দিয়ে সাজিয়ে নিন। এরপর ঢাকনা দিয়ে কম আঁচে মিনিট ৩-৪ পরপর পটলগুলো উল্টে দিতে হবে। আবারও ৩-৪ মিনিট ঢেকে দিতে হবে। পটনের দুই পাশ ভালো করে ভাজা হয়ে এলে নামিয়ে নিন।

সবজি খিচুড়ি: প্রথমে পরিমাণমতো চাল, ডাল ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। ডাল ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখা যেতে পারে।এছাড়া লাগবে পরিমাণমতো পেঁয়াজকুঁচি, রসুনকুঁচি, আদাকুঁচি, কাঁচামরিচ চেড়া, তেজপাতা, দারুচিনি, এলাচি, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, মিট মসলা। সবগুলো উপকরণ একটি রাইস কুকারে মিক্স করে এতে ৫ কাপ পরিমাণ পানি দিয়ে কয়েকমিনিট জ¦াল দিয়ে নিতে হবে। এরপরে এতে সবজি ও চাল ডাল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ১০ মিনিট পর ঢাকনা খুলে দেখতে হবে খিচুড়ি হয়েছে কিনা। হয়ে এলে সুইচ বন্ধ করে ৫ মিনিট দমে রাখতে হবে।

চিকেন বিরিয়ানি: প্রথমে পরিমাণমতো মুরগির মাংসের সঙ্গে পেঁয়াজ বাটা, মরিচ গুঁড়া, আদা-রসুন বাটা, লবণ, ধনিয়া গুঁড়া, মাংসের মসলা গুঁড়া, টক দই দিয়ে ৩ ঘণ্টার জন্য মাংস মেরিনেট করে রাখতে হবে। চাল সেদ্ধ হওয়ার জন্য আগে চাল ধুয়ে ঝড়িয়ে রাখতে হবে। এরপর একটা বড় পাত্রে কয়েকটা আস্ত দারুচিনি, এলাচ, শাহী জিরা, লবঙ্গ, তেজপাতা ও লবণ দিয়ে পানি দিয়ে বলক তুলতে হবে। এরপর পানিতে চাল দিয়ে দিতে হবে, প্রায় ৮০% সেদ্ধ হয়ে গেলে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে চাল থেকে। সামান্য হলুদ মেশানো পানিতে কয়েক টুকরো আলু সেদ্ধ করে নিতে হবে। এবার বেরেস্তা তৈরির পালা।একটা ননস্টিক প্যানে মিহি করে কেটে রাখা পেঁয়াজ নিয়ে একদম কম আঁচে চুলায় রেখে নাড়তে হবে কিছুক্ষণ। পেঁয়াজ থেকেই তার নিজস্ব একটা তেল বের হয়। অল্প আঁচে সেই তেল দিয়েই বেরেস্তা হয়ে যাবে। তবে একটু সময় লাগবে।গাঢ় বাদামী কালার চলে আসলে বেরেস্তা রেডি। এবার মেরিনেট করা মাংস চুলায় দিয়ে প্রথমে ১০ মিনিট চুলার জ্বাল বাড়িয়ে রান্না করতে হবে। এরপর আরো ১০ মিনিট মাঝারি আঁচে রান্না করে পানি শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর সেদ্ধ করা চাল আর আলু মাংসের ওপর বিছিয়ে দিতে হবে। কিছু বাদাম, কিসমিস, আলুবোকারা ছড়িয়ে দিলে টেস্ট বাড়বে। এক কাপ তরল দুধে সামান্য জাফরান আর গোলাপ জল মিশিয়ে তা চালের ওপর ছিটিয়ে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ভালো করে ঢেকে দমে দিতে হবে ১০ মিনিটের জন্য।

শুটকি: পছন্দমতো শুটকি ধুয়ে নিতে হবে। এরপর পেঁয়াজ, রসুন, সবজি, মসলা একসঙ্গে ভালোভাবে করে মাখাতে হবে। এরপর চুলায় বসিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ২/৩ মিনিট পর ঢাকনা খুলে নাড়া দিতে হবে যাতে লেগে না যায়। সবজি থেকে যে পানি ছাড়বে তাতে সবজি ও শুটকি প্রায় আধাসেদ্ধ হয়ে যাবে। এরপর যতটুকু ঝোল প্রয়োজন দিয়ে আবার ঢেকে দিতে হবে। ১৫ /২০ মিনিট সাধারণ তাপে রান্না করলে হয়ে যাবে তেল ছাড়া মজাদার শুটকি তরকারি। নামানোর আগে ধনিয়া পাতা দিয়ে একটা বলক তুলে নিতে হবে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, তেলবিহীন খাবার খেলে ব্লাডপ্রেসার কমে, ওজন কমে, হার্ট ভালো থাকে এবং সুগার কন্ট্রোল হয়। ২০ বছরের পরে তেলযুক্ত খাবার ছেড়ে দেওয়া উত্তম। প্রতিটা সবজি ও খাবারে তেল রয়েছে। সেসব তেল আমাদের দেহের ভেতরের অভাব পূরণ করে। অতিরিক্ত তেল আমাদের দেহের নানান ক্ষতি করে ও হার্টের ব্লক সৃষ্টি করে।