॥ আবুল বাশার শেখ॥

আল্লাহর জমিনে একমাত্র আল্লাহর মনোনীত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মহান আল্লাহ আমাদের একমাত্র প্রভূ। আমাদের বিশ্বাস এবং আশ্রয়স্থল এই মহান ধর্ম ইসলাম। ইসলাম ধর্ম যারা পালন করছেন তারাই মুসলমান। ইসলাম ধর্মের ধারক ও বাহক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)। আমরা সেই নবীর শ্রেষ্ঠ উম্মাত। সুতরাং মুসলমান হিসেবে কর্তব্য হলো রাসূল (সা.) এর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। উনাকে অনুসরণ-অনুকরণ করা। উনার সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা। উনাকে জান-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হরজত রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে শুধু যে অস্বীকার করেছে সে ছাড়া। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কে অস্বীকার করবে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যে আমার আনুগত্য করল; সে জান্নাতে যাবে আর যে আমার অবাধ্য হলো-সে অস্বীকার করল।’-সহিহ বোখারি।

মহান আল্লাহ তা’লা কুরআনের একাধিক আয়াতে রাসূল (সা.) কে সৃষ্টিজগতের সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসতে বলেছেন। আল্লাহ তা’লা বলেন, ‘বলো, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তানাদি, তোমাদের ভাই, তোমাদের পরিবার-পরিজন, তোমাদের বংশ-গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং বাসস্থান, যাকে তোমরা পছন্দ কর, (তা যদি) আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর রাহে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করবেন না।’ (সূরা আত তাওবাহ: ২৪)

ফার্সি কবি আল্লামা শেখ সাদি (রহ.) রাসূল প্রেমে রচিত কাব্যে বলেন ‘বালাগাল উলা বি-কামালিহি, কাশাফাদ্দুজা বি-জামালিহি, হাসুনাত জামিয়ু খিসালিহি, সাল্লু- আলায়হি ওয়া আলিহি।’ কবিতাটির বাংলা অর্থ অনেক কবি সাহিত্যক অনেকভাবে করেছেন। কোনো এক বিখ্যাত কবির ভাষায় এর অনুবাদ, ‘সুউচ্চ শিখরে সমাসীন তিনি নিজ মহিমায়, তিমির-তমসা কাটিল তাঁর রূপের প্রভায়, সুন্দর আর সুন্দর তাঁর স্বভাব চরিত্র তামাম, জানাও তাঁর ও তাঁর বংশের পরে দরূদ-সালাম।’ এই অমর কাব্য আলেম ওলামাদের মুখে মুখে শত শত বছর ধরে।

একজন প্রকৃত মানুষ অপর একজন মানুষকে ভালোবাসে হৃদয়ের গভীর থেকে বিশ্বাসের মাধ্যমে। বাস্তবতায় যার প্রতিচ্ছবি দেখা যায় ঐ ব্যক্তির আচার-আচরণ ও কাজ-কর্মে।

আল্লাহর প্রিয় দোস্ত হযরত মুহাম্মদ (সা.)ছিলের সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী, তাঁকে ভালোবাসলে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর প্রতিচ্ছবিই প্রস্ফুটিত হতে হবে। তাঁর প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে হবে পরিবারের প্রতিটি সদস্যদের মধ্যে। আলোকিত পরিবার, সমাজ ও দেশ গঠন করতে চাইলে রাসূলের জীবন থেকে শিক্ষা নিতে হবে। কোলের ছোট্ট শিশুটি যেন শুরু থেকেই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে বড় হতে পারে সেজন্য প্রতিটি মুসলমানকে সচেতন থাকতে হবে। শিশুটির প্রথম ভাষা শিক্ষার শব্দটি যেন আল্লাহ হয়। পরের শব্দটি যেন রাসূল হয়। প্রথম বাক্যটি যেন হয় কালেমা। শিশুটির চরিত্র গঠনে ধর্মীয় শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। আমাদের বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে যে চিত্র আমরা দেখতে পাই তা অত্যন্ত ভয়াবহ।

প্রতিটি সমাজ থেকে একটি করে আলোকিত পরিবার খোঁজে বের করা খুবই দূরহ।

রাসূলের জীবন চর্চা আমাদের বৃদ্ধি করতে হবে। রাসূলের কল্পনা করলে যেন অন্তর যেন খুশি হয়, তাঁর আলোচনা আত্মার জন্য যেন খাদ্য হয়। তাঁর ভালোবাসায় অন্তর সব সময় যেন সিক্ত থাকে।

পবিত্র কোরআন ও হাদীস অনুযায়ী, সব রকমের লোক, যথা- বড়-ছোট এবং সম-সাময়িকদের ভালোবাসার চেয়ে অধিক ভালোবাসা রাসূলের জন্য হওয়াটা পূর্ণাঙ্গ ঈমানের দাবি। সাহাবীগণ রাসূল (সা.)-কে জান-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। তাঁকে যথাযথভাবে মর্যাদা দিতেন। সর্বদা তাঁর অনুসরণ-অনুকরণে ব্রতী ছিলেন। তাঁর আদেশ-নিষেধ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন।

রাসূলের আদর্শকে সমুন্নত রাখাই ছিল তাঁদের একমাত্র সাধনা। রাসূলের জন্য তাঁদের ভালোবাসা নিজেদের ছেলে-মেয়ে, পিতা-মাতা, আত্মীয় স্বজনদের চেয়েও অধিক ছিল। সাহাবীগণদের মতো আমাদেরকেও রাসূল (সা.)-কে জান-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে হবে। সর্বাবস্থায় তাঁর আদর্শকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করতে হবে।

সর্বপরি একটি আলোকিত প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাইলে রাসূলের জীবন এবং কর্ম নিয়ে শিশু-কিশোর এবং যুবকদের মধ্যে চর্চা বৃদ্ধি করতে হবে। রাসূল (সা.) যা বলেছেন তা সত্য বলে মেনে নেয়া এবং তাঁর আনুগত্য করা আমাদের জন্য অপরিহার্য। প্রত্যেক কাজে রাসূলের অনুগত্য করাই হচ্ছে রাসূলের প্রতি ভালোবাসা। রাসূলের প্রতি ভালোবাসা যতো বাড়বে রাসূলের আনুগত্যও ততো বাড়বে।

আবুল বাশার শেখ (এম.এ)

কবি, সাংবাদিক, কলামিস্ট

দপ্তর সম্পাদক,

ভালুকা প্রেসক্লাব, ভালুকা, ময়মনসিংহ

মোবাইল: ০১৯১৬৫৯৫৪৪০, ০১৭১৭০৩৯৮৭৯

ই-মেইল: basharpoet@yahoo.com

abasharpoet@gmail.com

ফেসবুক আইডি: যঃঃঢ়ং://https://www.facebook.com/abul.b.sheikh