অনলাইন ডেস্ক : বিশ্বকাপের ইতিহাসে সব সময়ই আর্জেন্টিনা বনাম নেদারল্যান্ডস ম্যাচের একটি বিশেষ জায়গা ছিল। কাতার বিশ্বকাপের আগেও কমলা রঙের মুখোমুখি হয়েছে আকাশি নীল ও সাদা শিবির।
এই দুই পক্ষের মধ্যে মোকাবিলাগুলো ‘কিংবদন্তি’ আখ্যা পেয়েছে অনেক আগেই। এবার কাতারে তাদের কোয়ার্টার-ফাইনালের তারকাযুদ্ধগুলোর মধ্যে একটি হতে চলেছে।
আলবিসেলেস্তে বনাম ওরাঞ্জের মোকাবিলার এই সর্বশেষ সংস্করণ ফুটবলপ্রেমীদের যেন ব্রাজিল বনাম সুইডেন, আর্জেন্টিনা বনাম জার্মানির (পশ্চিম জার্মানি) ম্যাচগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। জার্মানরা যেমন ছয়বার যুগোস্লাভিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল, আর্জেন্টিনাও এবার নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো নেদারল্যান্ডসের সামনে দাঁড়াচ্ছে।
ক্রুইফ পাঠ :
১৯৭৪ সালের ২৪ জুন পশ্চিম জার্মানি আয়োজিত বিশ্বকাপ আসরে গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই দল। সেদিন জোহান ক্রুইফের জোড়া গোল এবং ডাচদের চিত্তাকর্ষক ফুটবল আর্জেন্টাইনদের পুরোপুরি অভিভূত করেছিল। ১৪ নম্বরের ড্রিবল গোলরক্ষক ড্যানিয়েল কার্নেভালিকে পরাস্ত করে। তার দৃষ্টিনন্দন ক্রসকে জনি রেপের গোলে তার ক্রস আনন্দের ছিল। দ্বিতীয়ার্ধটি ওরাঞ্জের সেট করা ভিন্নগতির শৈল্পিক খেলায় পরাস্ত হয় আর্জেন্টিনা। নেদারল্যান্ডস তাদের প্রতিপক্ষকে এই ম্যাচে উড়িয়ে দেয় ৪-০ ব্যবধানে।
কেম্পেসের মধুর প্রতিশোধ :
আর্জেন্টিনা ঘরের মাটিতে ১৯৭৪ সালের হারের প্রতিশোধ নিয়েছিল ১৯৭৮ সালের ২৫ জুন। ১৯৭৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে আলবিসেলেস্তেরা। সেই ম্যাচের নায়ক ছিলেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার মারিও কেম্পেস। তিনি একটি পেনাল্টি এলাকায় দুই কমলা ডিফেন্ডারের মাঝখানে পিছলে গিয়েছিলেন। এই ঘটনায় পেনাল্টি। আর পেনাল্টি থেকেই গোল। এর পর ডাচদের পক্ষে ডিক নানিঙ্গা হেডের সাহায্যে গোল করে সমতা ফেরান। পরে ড্যানিয়েল বার্টোনির পেনাল্টি দিয়ে জয় নিশ্চিত করে প্রথমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা।
বার্গক্যাম্পের অবিস্মরণীয় গোল :
১৯৯৮বার্গক্যাম্পের অবিস্মরণীয় গোল সালের ৪ জুলাই ফ্রান্স আয়োজিত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ফের ডাচদের মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। ওই ম্যাচে নেদারল্যান্ডস জয় পায় ২-১ ব্যবধানে। ডেনিস বার্গক্যাম্পের প্রতিভা মার্সেইয়ের ভেলোড্রোম স্টেডিয়ামের রোদে এই তৃতীয় কিংবদন্তি দ্বৈরথকে আলোকিত করেছিল। প্রতিভাবান এই আর্সেনাল ফরোয়ার্ড এদিন করেন বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোল। এই ম্যাচের প্রথমার্ধে প্যাট্রিক ক্লুইভার্ট এবং ক্লাউদিও লোপেজের গোলে ম্যাচের সমতা নিয়ে যাওয়ার পর শেষ মিনিট পর্যন্ত আর কোনো গোল হয়নি। পুরো মাঠ দেখে বার্গক্যাম্প একটি ৬০ মিটার দূরত্বে পাস তার পায়ে বেলুনের মতো নামিয়ে আনেন। তারপর কোণ থেকে একটি অবিশ্বাস্য শট করে দুর্দান্তভাবে শেষ করেন।
এরপর থেকে এই দুই দলের অসামান্য ম্যাচের ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে। পরের দুটি মোকাবিলা গোলশূন্য শেষ হয়েছিল। আগামী শুক্রবার এই দুই দলের লড়াইয়ের নতুন অধ্যায় লেখা হবে।