অনলাইন ডেস্ক : দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের ওপর ঝড়-জলোচ্ছ্বাস প্রায় প্রতিবছরই আঘাত হানে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করে ২০০৭ সাল থেকে। এর আগে একটা সময় ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনের নামকরণ হতো না।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে ১৯৬০ সাল থেকে ২০০৭ সালে সিডরের পর্যন্ত বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়গুলোকে 'সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম' বা প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বিবেচনা করা হয় ১৯৭০ ও ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়কে। এরপরের অবস্থান ঘুর্ণিঝড় সিডর।
ঘণ্টায় দেড়শ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগ নিয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’।
এছাড়া আরও কিছু ঘূর্ণিঝড়ের খবর পাওয়া যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে: ১৯৬০ সালের ১১ অক্টোবর ১৬০ কি:মি গতিবেগে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল। ওই বছরের ৩১শে অক্টোবরের প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ৫ লাখ ১৪৯ জন নিহত হয়। ৬.১ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাস ছিল।
১৯৬৬ সালের ১ অক্টোবর চট্টগ্রামে ২০-২২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের প্রবল শক্তিধর ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। ২০১৫ সালের ৩০শে জুলাই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে ৫-৭ ফুট উচ্চতার ঘূর্ণিঝড় 'কোমেন'।
২০১৬ সালের ২১শে মে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলে ৪-৫ ফুট উচ্চতার ঘূর্ণিঝড় 'রোয়ানু'।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পাওয়া আরো কিছু ঘূর্ণিঝড় হলো ১৯৬১ সালের ৯ মে ও ৩০ মে, ১৯৬৩ সালের ১৮ মে, ১৯৬৫ সালের ১১ মে, ৫ নভেম্বর ও ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৬৬ সালের ১ নভেম্বর, ১৯৭০ সালের ২৩ অক্টোবর, ১৯৭৪ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৩ সালের ১৫ অক্টোবর ও ৯ নভেম্বর, ১৯৮৮ সালের ২৯ নভেম্বর, ১৯৯০ সালের ১৮ ডিসেম্বর, ১৯৯৪ সালের ২ মে, ১৯৯৫ সালের ২৫ নভেম্বর, ১৯৯৭ সালের ১৯ মে ও ১৭ আগস্ট, ১৯৯৮ সালের ২০ মে, ২০০০ সালের ২৮ অক্টোবর, ২০০২ সালের ১২ নভেম্বর ও ২০০৪ সালের ১৯ মে আঘাত হানে।
আলোচিত ঘূর্ণিঝড়গুলো মধ্যে রয়েছে-
১৯৭০ সালের ভোলার ঘূর্ণিঝড়: ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর ভোলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ঘূর্ণিঝড় ছিল এ অঞ্চলে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘূর্ণিঝড়। ১৯৭০ সালের প্রবলতম ঘূর্ণিঝড়ে ৫ লাখ মানুষ নিহত হন। অনেকে মনে করেন মৃতের সংখ্যা আসলে ৫ লাখেরও বেশি ছিল।
১৯৮৫ সালের ঘূর্ণিঝড়: উরিরচরের ঘূর্ণিঝড় নামে পরিচিত এই সাইক্লোনটি যার বাতাসের গতিবেগ ছিল ১৫৪ কিলোমিটার। তীব্র ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী এবং উপকূলীয় অঞ্চলে (সন্দ্বীপ হাতিয়া ও উড়ির চর) আঘাত হানে।
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়: এই ঘূর্ণিঝড়কে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড় বলে আখ্যায়িত করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ২০তম বছরে এসে বাংলাদেশ দেখে এই ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যায় এই প্রলয়ঙ্করী ঝড়টি। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার। এতে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল। এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
ঘূর্ণিঝড় সিডর: ২০০৭ সালে প্রথম স্পষ্ট নামকরণ করা ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’। ২২৩ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা এবং ১৫-২০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস নিয়ে আসা সেই ঘূর্ণিঝড় ছিল সিডর, যাকে সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম উইথ কোর অব হারিকেন উইন্ডস (সিডর) নাম দেয়া হয়।
ঘূর্ণিঝড় নার্গিস: ২০০৮ সালে ঘূর্ণিঝড় নার্গিস এর পূর্বাভাস দেয়া হলেও পরে তা বার্মার উপকূলে আঘাত হানে। মিয়ানমারে এর প্রভাবে বহু ক্ষতি হয়।
ঘূর্ণিঝড় আইলা: ২০০৯ সালে উত্তর ভারত মহাসাগরে জন্ম নেয়া দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড় 'আইলা'। ওই বছরের ২১ মে ভারতের কলকাতা থেকে ৯৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে ঘূর্ণিঝড়টির উৎপত্তি। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে এই ঝড় আঘাত হানে ২৫ মে।
ঘূর্ণিঝড় মহাসেন: বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণাংশে নিম্নচাপজনিত কারণে ২০১৩ সালের মে মাসের শুরুর দিকে উৎপত্তি ঘটে ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের। এতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কার্যত জনজীবন অচল হয়ে পড়ে।
ঘূর্ণিঝড় 'মোরা: ২০১৭ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে প্রবল বেগের ঘূর্ণিঝড় 'মোরা'। কক্সবাজারের টেকনাফে ১৩৫ কিমি বেগে আঘাত হানে এটি। এসময় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজার উপকূলে ১০ নম্বর মহা বিপদসংকেত জারি করা হয়। এছাড়া এতে মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়। এই ঝড়ের আঘাতে কক্সবাজার উপকূলের শতাধিক বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হয়।
ঘূর্ণিঝড় ফণী: ২০১৯ সালের ৪ মে সকালে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, যশোর ও খুলনা অঞ্চল এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ফণী। তবে আঘাতের পূর্বেই এটি দুর্বল হয়ে যায়। ফণীর প্রভাবে ও আঘাতে বাংলাদেশে মোট ১৮ জনের মৃত্যু হয়। ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে বাংলাদেশে ৫৩৬ কোটি ৬১ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয় বলে জানায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।