কলমাকান্দা প্রতিনিধি : নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় ইরি-বোরো ধানক্ষেতে ছত্রাকজাতীয় ব্লাস্ট রোগের আক্রমন প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ রোগে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে কলমাকান্দা সদর, বড়খাপন, রংছাতি ও পোগলা এ তিনটি ইউনিয়নের ক্ষেতের পর ক্ষেতের ধান ইতিমধ্যেই সাদা হয়ে গেছে।

তাছাড়া অন্য ইউনিয়নগুলোরও কিছু কিছু এলাকায় ধান সাদা হতে শুরু করেছে। কীটনাশক প্রয়োগেও প্রতিকার মিলছে না। কৃষকরা আশঙ্কা করছেন, ফসলের বড় ধরনের ক্ষতি হবে।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকেরা ২১ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ধান।

সরেজমিনে ঘুরে উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়নের মেদা বিল, গোড়াডোবা, জাঙ্গিয়া হাওরে দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত ধানের শিষ শুকিয়ে সাদা হয়ে গেছে। বড়খাপন গ্রামের কৃষক শাহ আলম বলেন, এ বছর ১২ একর জমিতে ইরি-২৮, ইরি-২৯ ধান আবাদ করেছি। ৪-৫ দিন আগে হঠাৎ ধানগাছের পাতার রং কালো হয়ে শিষ শুকিয়ে যেতে থাকে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী, ধানখেতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করিছি। কিন্তু চার পয়সারও কাজ হচ্ছে না। বিঘার পর বিঘা জমির ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। ফসল হারিয়ে আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছি। এখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কী খাব ভেবে পাচ্ছি না।

অপর কৃষাণী উজ্জ্বলা রানী বলেন, আমার পোলাপাইনে উপবৃত্তির ৪,০০০ টাকা পাইছি। পরে ওই টাকা দিয়ে আমি ৫ কাঠা জমি নিয়ে ২৮ বোরো ধান করছিলাম। তারপর হুখন কাঠার প্রতি ১২০০ টাকা দিয়ে ধান কাটাইয়া নিয়ে আসি। হুখন দেখি সব চুচা হয়ে গেছে। আমরার স্বপ্ন শেষ।

আরেক ক্ষুদ্র কৃষক হাফিজ উদ্দিন বলেন , আমার ৫০ কাঠা নিজ জমিতে ইরি-২৯ ধান জাতের চাষ করি। এখন সবদাই সাদা হয়ে মরে গেছে। এইটুকু জমিই ছিলো আমার। আমি এখন দিশেহারা।

এসময় তিনি উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তিনচার দিন ফোন করে পাই নাই। পরে আমাদের বাজারের সারের ডিলারের মাধ্যমে যোগাযোগ করি। পরে একদিন আসাইয়া বলেন, কি সমস্যা ? তখন আমি বলি চলেন জমির অবস্থা দেখে আমাদের পরামর্শ দিয়ে যাইন। কিন্ত জমিতে যাওয়ার জন্য ভালো রাস্তা নাই। যাওয়া যাবে না বলে চলেন যান তিনি।

উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের কেবলপুর গ্রামের কৃষক মিজান মিয়া বলেন, দেরদেনা করে তিনি ৮ একর জমিতে ইরি-২৮ জাতের ধান চাষ করেছেন। তারমধ্যে বেশির ভাগ ধান ব্লাস্ট রোগের আক্রান্ত হয়ে ধান চিটা হয়ে গেছে। এ অবস্থায় কি করে ঋণ পরিশোধ করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।

এবিষয়ে বড়খাপন ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকা সুলতান আহমেদ রাজু আমাদের বিরুদ্ধে কৃষকদের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে তিনি বলেন, অফিসে লোকবল সংকট থাকায় অতিরিক্ত আরো দুটি কৃষি ব্লকের তদারকি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। কৃষকদের সহায়তার জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি।

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কিছু ইরি-বোরোক্ষেত ব্লাস্ট রোগের আক্রান্ত হয়েছে।জনবল সংকটের মধ্যে কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তারা মাঠে কৃষকদের পাশে আছেন। পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ব্লাস্ট রোগের আক্রান্ত ধান ৭০ ভাগ পর্যন্ত ক্ষতি হয়। ধানের শিষ বের হওয়ার পর মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, বাতাসের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডা আবহাওয়া থাকলে ধানক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা দেয়। রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্লাস্ট রোগ বিস্তারের আগে টেবুকোনাজল-ফ্রাইফ্লক্সিস্টবিন গ্রুপের ছত্রাকনাশক ধানক্ষেতে ছিটাতে হবে।