মো. আশরাফুল ইসলাম আসাদ: ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলাধীন কালাদহ দাখিল মাদ্রাসায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছারিতার অবলম্বন করে ভুয়া সার্টিফিকেট দশ বছর বয়স কমিয়ে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট নথিপত্র ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,ফুলবাড়িয়া উপজেলার কালাদহ দাখিল মাদ্রাসার নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া ২ জনকে নিয়োগের জন্য দুইটি পত্রিকায় বিধিসম্মত গত ১ ডিসেম্বর ২০২২ইং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। গত ২০ ডিসেম্বর আবেদনের শেষ তারিখে আয়া পদে এবং নিরাপত্তাকর্মী পদে ৮ জন আবেদন করেন। মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম এবং সুপার নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থে সুবিধা মত নিয়োগ দিতে পরিকল্পনা স্বরূপ কাজ শুরু করে। সভাপতির নিটকআত্মীয় শিহাবুর রহমান ঝড়েপড়া শিক্ষার্থী থাকা স্বত্বেও তাঁকে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে চূড়ান্ত করে।

অথচ শিহাবুর ওই মাদ্রাসায় ২০২০ সালে ৫ম শ্রেণিতে অধ্যয়রনত অবস্থায় ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উপবৃত্তি পায়। পরে দীর্ঘদিন যাবৎ পড়াশুনা বন্ধ করে দেয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর নরেচরে বসে। সে তাঁর জন্ম সনদে ১০ বছর বয়স কমিয়ে, টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইলের মুরাইদ সিরাজনগর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৮ম শ্রেণীর জাল সার্টিফিকেট নিয়ে এ পদে আবেদন করেছে। সে উপজেলার ১০নং কালাদহ ইউনিয়নের কালাদহ গ্রামের মো. মোকছেদ আলীর পুত্র।

নানা অনিয়মের কারনে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়ায় নিরাপত্তা কর্মী পদে আবেদনকারীগণ প্রতিবাদ করায় সভাপতি ও সুপার প্রকাশ্যে তাঁদের হুমকি দিয়ে আসছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ভুয়া সার্টিফিকেটে দশ বছর বয়স কমিয়ে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে নিয়োগ দিতে শিহাবুর রহমানের কাছ থেকে মোটাঅংকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছে।

অন্য প্রার্থী কালাদহ এলাকার মোহাম্মদ আলীর পুত্র ইয়াকুব আলী বলেন, এখানে আইন ভঙ্গ করা হয়েছে। মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সুপার মিলে রাতের আধারে অবৈধভাবে নিকট আত্মীয়কে নিয়োগ দিয়েছে। এ ছাড়া কাউকে চাকরি দেয়ার নাম করে অর্থ নেয়া ঠিক হয়নি। তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াসহ নিয়োগ বাতিলের দাবী জানায়।

অভিযুক্ত প্রার্থী শিহাবুর এর সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটির একাধিক সদস্য জানান, ওই মাদ্রাসার সভাপতি, সুপারের যোগসাজসে ভুয়া সার্টিফিকেটে দশ বছর বয়স কমিয়ে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে শিহাবুর রহমানকে নিয়োগ দিয়েছে। তাঁদের নিকটআত্মীয় নিয়োগের আবেদন করলে নিয়োগ বোর্ডে অথবা নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রমে তাঁদের ডাকেন না। সুপার সাহেব যদি এ ধরনের জঘন্য কাজে জড়িত থাকে, তবে শিক্ষার্থীরা তাঁদের কাছ থেকে কি শিখবে? এই অনিয়মের দায়-ভার সুপার এবং কর্তৃপক্ষের অবশ্যই নিতে হবে।

মুরাইদ সিরাজ নগর দাখিল মাদ্রাসার সুপার ছাইফুল ইসলাম বলেন, যেহেতু আমার মাদ্রাসার সাটিফিকেট তাহলে সে আমার মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিল। আগে অন্য মাদ্রাসায় পড়া লেখা করতে।

সুপার মাওলানা আব্দুল মোন্নাফ বলেন, প্রার্থীর সকল সার্টিফিকেট, ভোটার আইডি কার্ড ও জন্ম নিবন্ধন যাচাই-বাছাই করে আমরা সিলেক্ট করেছি।

মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তথা সুপার মহোদয় সকল সার্টিফিকেট যাচাই করে প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে। বোর্ড যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ দিয়েছেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ বেলায়েত হোসেন বলেন, যদি অভিযোগ থাকে প্রমান সাপেক্ষে তাহলে নিয়োগপত্র বাতিল করে দেব।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদুল করিম বলেন,অভিযোগ দাখিল করা হলে তদন্ত করে দেখা হবে।