কলমাকান্দা প্রতিনিধি: হাঁস-মুরগির প্রধান শত্রু বলা হয়ে থাকে পণ্ডিত মহাশয় শেয়ালকে। সুযোগ পেলেই জীবন নাশ করে দেয় শেয়াল। বাংলায় জনপ্রিয় প্রবাদও রয়েছে, ‘শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেওয়া।’ তবে প্রবাদের ব্যতিক্রমও যে ঘটে তা দেখা গেল নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের নয়নকান্দি গ্রামে। হাঁস-মুরগি ও শেয়াল একই পাত্রে খাচ্ছে, থাকছে একই বাড়িতে। এমনকি রাতে একই ঘরে নিরভাবনায় কাটছে তাদের। দেখে যেন মনে হবে বনে গেছে শেয়াল-মুরগিতে দোস্তি।

বিষয়টি শুনতে বা ভাবতে অবাক লাগলেও বাস্তবে শেয়াল-মুরগির দোস্তি দেখতে উপজেলার নয়নকান্দি গ্রামে ভিড় করছে উৎসুক জনতা।

শিয়ালের মালিক আজিজুল হকের স্ত্রী সুমা আক্তার বলছেন, হাঁস-মুরগি ও লালু (শেয়াল) এক পাত্রে খাবার খায়। পশু-পাখির সঙ্গে সে থাকে। শেয়ালটি তাদের কোনো ক্ষতি করে না।

বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, লালু বাড়ির পাশে একটি টিলার ওপর বসে আছে। আর উঠানে ছাগল, হাঁস, মুরগি ঘুরছে-ফিরছে। দেখে মনে, হচ্ছিল তারা যেন একই পরিবারের সদস্য।

সুমা আক্তার বলেন, দেড় বছর আগে তার স্বামী আজিজুল হক নাজিরপুর ইউনিয়নের লোহারগাও এলাকায় কাজে যান। সেখানের একটি জলাশয়ে মাছ ধরছিলেন কয়েকজন আদিবাসী নারী। তারা দেখেন পাশের একটি জঙ্গলে তিনটি শিয়ালের বাচ্চা ঘুরছে। পরে তারা বাচ্চাগুলোকে উদ্ধার করেন। এর মধ্যে থেকে একটি বাচ্চা বাড়ি নিয়ে আসেন আজিজুল। তখন বাচ্চাটির বয়স প্রায় তিন মাস। বোতলে করে দুধ খাওয়ানো হতো লালুকে। পরে শিয়ালটিকে মানুষের খাবার খাওয়ানো হয়। তাতে সে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। বর্তমানে লালুর বয়স প্রায় দুই বছর। হাঁস-মুরগির খাবার সে খায়। সারাদিন উঠানে ঘুরে বেড়ায়। রাতে পশু-পাখির সঙ্গে একই ঘরে সে থাকে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘আমরা জানি শেয়াল হচ্ছে মাংসাশী প্রাণী। যেসব প্রাণীর জলাতঙ্ক বা জীবাণু বহন করে তাদের মধ্যে শেয়াল অন্যতম। সেক্ষেত্রে জলাতঙ্ক টিকা শিয়াল ও পালনকারী দুজনকেই নেওয়া উচিত। আর শেয়ালের প্রধান খাবার প্রাণীর মাংস, খরগোশ, ইঁদুর, টিকটিকি, মুরগি, হাঁস, ইত্যাদি। তাই সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে।’