আরিফ আহম্মেদ : অবশেষে জলবুরুঙ্গা নদীর বুকে আশার আলো দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নদীতে দীর্ঘদিন জমে থাকা কচুরিপানা পরিষ্কার করার কাজ শুরু করেছেন সহনাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সালাহ উদ্দিন কাদের রুবেল।

এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবী, গত পাঁচ বছর যাবত জলবুরুঙ্গা নদীর বুকে জমে থাকা কচুরিপানা পরিষ্কার করার। এতে স্বচ্ছ জল আর সুস্বাদু মাছের এ নদীটি ফিরে পাবে তার হারানো ঐতিহ্য। কচুরিপানার কারণে ইতিমধ্যে নাব্যতা হারিয়ে মৃত প্রায় জলবুরুঙ্গা।

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার অচিন্তপুর ও সহনাটি ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এ নদীর সাথে মিশে আছে দুই পাড়ের হাজারো মানুষ জীবন ও জীবিকা। নদীর পানি দিয়ে চলে কৃষি ও ফসলী জমিতে সেচ। এছাড়াও নদীর জলমহাল ইজারা দিয়ে প্রতিবছর সরকারের রাজস্ব আয় হয় লাখ লাখ টাকা।

জানা যায়, ২০১৯ সালে নদীর উপর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হলে কচুরিপানা জমতে থাকে। একসময় কচুরিপানায় ঢেকে যায় প্রায় দশ কিলোমিটার এলাকা। দীর্ঘদিন যাবত এ অঞ্চলের মানুষেরা জোরালো দাবী জানি আসলেও নানান জটিলতায় সরকারিভাবে পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়নি।

কামারজানি গ্রামের আব্দুর রহিম (৭০) বলেন, এ নদীর পানি ছিল কাঁচের মতো স্বচ্ছ। জন্মের পর নদীতে কখনো কচুরিপানা জমতে দেখিনি। নদীতে স্রোত ও পানি থাকতো সারাবছর। সেতু নির্মাণের পর হঠাৎ কচুরিপানায় নদী ভরে যায়।

মোঃ লাল মিয়া (৭২) বলেন, এ নদীর পানি দিয়ে আমরা কৃষি কাজ করি, ফসল ফলাই।

এর মাছ অনেক স্বাদ। মাছ শিকার করে পেট চালাতাম আমরা। নদীতে এখনো ২০-২৫ ফুট পানি আছে, কিন্তু কচুরিপানার কারণে আমরা খুব কষ্টে আছিলাম। এখন চেয়ারম্যান সাব পরিষ্কার করাচ্ছেন।

খয়রা দৌলতপুর গ্রামের রাজিয়া আক্তার (৬০) বলেন, আমি এই গ্রামেরই মেয়ে। ছোট থেকেই এ নদীতে সাঁতার কেটেছি, গোসল করেছি। এই নদীর মাছ খেয়ে বড় হয়েছি। কচুরিপানায় আমাদের সব শেষ করে দিয়েছিল।

সহনাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সালাহ উদ্দিন কাদের রুবেল বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের কাছে জলবুরুঙ্গা নদীর গুরুত্ব কতোটা, তা আমি ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই নদীর কচুরিপানা পরিষ্কারের পরিকল্পনা করছিলাম। নানা প্রতিবন্ধকতায় সরকারি ফান্ড পাওয়া যায়নি। তাই ব্যক্তি উদ্যোগে এলাকার মানুষকে সাথে নিয়ে কচুরিপানা পরিষ্কার শুরু করলাম। এখানে প্রতিদিন দুইশত শ্রমিক কাজ করছেন। ১৫-২০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে আশা করছি।

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফৌজিয়া নাজনীন দৈনিক সবুজকে জানান, কচুরিপানা জমার কারণে বেশ কয়েক বছর যাবত জলবুরুঙ্গা নদীর জলমহাল ইজারা দেয়া যাচ্ছে না, সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যানের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, পরিষ্কার করা হলে তা সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।