হালুয়াঘাট প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার দড়িনগুয়া গ্রামের সুজন মিয়া। জীবিকার তাগিদে গিয়েছিলেন বিদেশে।
১০ বছর প্রবাস জীবন অতিবাহিত করে ফিরে আসেন দেশে। কিন্তু দেশে কি করবেন তা নিয়ে ছিলেন বেশ চিন্তিত। অন্যের অধীনে কাজ না করে নিজেকে কিভাবে একজন সফল উদ্যোক্তা করে গড়ে তুলা যায় সেটা নিয়েই ভাবতে থাকেন। সে ভাবনা থেকেই ২০১৯ সালের শেষের দিকে বাড়িতে প্রথমে ২টি উন্নতজাতের গাভী পালন শুরু করেন। আস্তে আস্তে গাভী পালন বেশ ভালো লেগে যায় তার কাছে। এরপর যোগাযোগ করেন উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসে। সেখান থেকে গাভী পালনের বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে তার বাড়ির পাশে ৫ শতক জায়গার উপর গড়ে তুলেন আর এস ডেইরী ফার্ম। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে উন্নতমানের ১৬ টি গাভী। কয়েকদিন আগে বিক্রি করেছেন ১২ টি গাভী ও বাচ্চা। গাভীর খাদ্যের জোগান দিতে বাড়ির পেছনে ৮ শতক জমিতে রোপন করেছেন উন্নতজাতের অধিক ফলনশীল নেপিয়ার ঘাস। খাদ্যমান বেশি থাকায় গবাদিপশুর জন্য এ ঘাস বেশ উপাদেয় ও পুষ্টিকর। পাশাপাশি পরীক্ষামূলক ভাবে কিছু ছাগল পালন করছেন। ভালো ফলাফল পেলে ছাগলের জন্য আলাদা খামার করার ইচ্ছে তার। প্রতিটি গাভী থেকে সর্বনিন্ম ১৫ লিটার করে দুধ পাওয়া যায়। গরুর দুধ বিক্রি করে, সে টাকায় গরুর খাবার এবং আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে তার দৈনিক ভালো আয় থাকে। পাশাপাশি গরুর বাচ্চা বিক্রি করেন তিনি। যা তার মূল আয়ের উৎস।
এ বিষয়ে উদ্যোক্তা সুজন মিয়া বলেন, গাভী পালন লাভজনক জেনে প্রথমে বাড়িতে উন্নতজাতের ২টি গাভী ক্রয় করে পালন শুরু করি। কয়েকদিন পরই গাভী থেকে বাচ্চা হয়। এরপর আস্তে আস্তে আমার আগ্রহ বাড়তে থাকে। এখন আমার এখানে ১৬টি গাভী আছে। দুধের বাজার সবসময় এক রকম থাকেনা। আমি আমার গাভীগুলোকে সবসময় পুষ্টিকর এবং ভালো খাদ্য যাতে দেওয়া যায়, সে জন্য খামার করার আগেই বাড়ির পেছনে নেপিয়ার ঘাস রোপন করি। গো-খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য উন্নতজাতের ঘাস চাষ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উন্নতমানের ঘাস চাষ করায় আমার গাভীগুলোর কিনা খাদ্য দিতে হয় না। ঘাস কাটার জন্য আমার এখানে মেশিন রয়েছে। এতে করে আমার ব্যয় অনেক কম। আসলে গাভী পালনে কোন লোকসান নেই।
গাভীর দুধ, বাচ্চা এবং গোবরও বিক্রি করা যায়। আমার এখানে গোবর নিতে এক রকম সিরিয়াল লেগে যায়। প্রতি ট্রলি গোবল ৫ থেকে ৬শত টাকা বিক্রি করি। দেশের বিভিন্ন জায়গা এসে অনেক খামারী গরুর বাচ্চা নিয়ে যায়। আমার এখানে বর্তমানে ২জন শ্রমিক কাজ করছে। আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা আছে বাড়ির পাশে ছাগলের একটি খামার দিবো। বর্তমানে ছাগলের চাহিদাও প্রচুর রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমি নিজেও বিদেশ করে এসেছি। বিদেশে যে পরিমাণ কষ্ট সহ্য করে কাজ করতে হয়, তার থেকে সে অর্থ দিয়ে প্রাথমিক অবস্থায় ২ টি উন্নতজাতের গাভীও যদি কেউ পালন করে, তাহলে অল্প দিনেই লাভবান হতে পারবে। এই এলাকায় ন্যায্য মূল্যে দুধ বিক্রির জন্য চিলিং সেন্টার স্থাপন করা গেলে এলাকার ডেইরী খামারীরা যেমন উপকৃত হবে, পাশাপাশি নতুন নতুন উদ্যোক্তাও গড়ে উঠবে বলে তিনি মনে করেন।
হালুয়াঘাট উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. তারেক আহমেদ বলেন, সুজন মিয়া একজন ভালো উদ্যোক্তা। গাভী পালনের বিষয়ে সে খুবই আগ্রহী ছিলো। আমরা তাকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। আসলে যে কোনো কিছু গড়তে সবার আগে প্রয়োজন প্রাথমিক প্রস্তুতি। এ প্রস্ততির ওপর নির্ভর করে, যে কোনো কাজের সফলতার ও ব্যর্থতা। ডেইরি ফার্ম গড়ে তুলতে প্রয়োজন আর্থিক সঙ্গতি, অভিজ্ঞতা ও গরুর নিরাপদ আশ্রয়। প্রথমেই বিশাল ফার্ম তৈরিতে হাত না দিয়ে, ছোট পরিসরে কাজে হাত দেয়া ভালো।
সুজন মিয়া আমাদের পরামর্শ মেনে ঠিক এভাবেই তার ফার্ম শুরু করেছে। আমরা উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস থেকে তাকে সবধরনের সহযোগীতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।