ডেস্ক রিপোর্ট : তরুণ স্বেচ্ছাসেবী সংযুক্তিতে কৈশোর-বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মান বৃদ্ধি বিষয়টিকে তরান্বিত করা ও কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবায় স্বেচ্ছাসেবীদের সংযুক্তি স্থায়ীকরণের উঠেছে। কৈশোর-বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক জাতীয় পর্যায়ের মতবিনিময় সভায় এমন দাবী করেন বক্তারা।

বুধবার “সিরাক-বাংলাদেশ” কর্তৃক পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল এর সহযোগিতায় USAID সুখী জীবন প্রকল্পের অধীনে ’সিরাক-বাংলাদেশ’ এর নির্বাহী পরিচালক এস এম সৈকত-এর সঞ্চালনায় এবং পরিচালক এমসিএইচ-সার্ভিসেস পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, ঢাকা ডাঃ মোঃ মুনীরুজ্জামান সিদ্দীকী এর সভাপতিত্বে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে কৈশোর-বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক জাতীয় পর্যায়ের মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক (গ্রেড-১) সাহান আরা বানু, এনডিসি।

বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, লাইন ডাইরেক্টর (এফপি-এফএসডি ইউনিট) মোঃ সোহেল পারভেজ, লাইন ডাইরেক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ক্লিনিক্যাল কন্ট্রাসেপশন সার্ভিসেস ডেলিভারী প্রোগ্রাম ইউনিট পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ডাঃ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, পরিচালক (আইইএম) ও লাইন ডাইরেক্টর (আইইসি) আবদুল লতিফ মোল্লা, পরিচালক (পরিকল্পনা) এবং লাইন ডাইরেক্টর (পিএমই) মোঃ মতিউর রহমান, যুগ্ম সচিব ও পরিচালক বিভাগীয় পরিবার পরিকল্পনা ঢাকা মোঃ মাহাবুব আলম, লাইন ডাইরেক্টর এমআইএস পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, ঢাকা নিরঞ্জন বন্ধু দাম, পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল এর কান্ট্রি ডাইরেক্টও মো. মাহবুব উল-আলম, অ্যাডোলেসেন্ট এন্ড ইয়ুথ স্পেশালিষ্ট, পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল ঢাকা ডাঃ ফাতেমা শবনম, ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক,পরিবার পরিকল্পনা মীর সাজেদুর রহমান, এফপি ২০৩০, সিএসও, ফোকাল পয়েন্ট বাংলাদেশ ডাঃ আবু জামিল ফয়সাল,পরিচালক, মিরপুর মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ডাঃ রতন কুমার আগরওয়ালা।

সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রোগ্রাম ম্যানেজার (এ অ্যান্ড আরএইচ) পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ঢাকা ডাঃ মনজুর হোসেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (কিউ এ) ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার (কিউ এ) সিসিএসডিপি ডা. শামীম মোঃ আকরাম, সহকারী পরিচালক (কো:এ্যা:) এবং ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (কো:এ্যা:) ক্লিনিক্যাল কন্ট্রাসেপশন সার্ভিসেস ডেলিভারী প্রোগ্রাম ইউনিট ডা. মোঃ রফিকুল ইসলাম তালুকদার, জেলা পরিবার পরিকল্পনা ঢাকা এর উপ- পরিচালক মোহাম্মদ আমান উল্লাহ, জেলা পরিবার পরিকল্পনা নারায়ণগঞ্জ এর উপ-পরিচালক স্বপন কুমার শর্মা, জেলা পরিবার পরিকল্পনা, নেত্রকোণা এর উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামাল হোসেন,USAID সুখী জীবন পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল ঢাকা এর অ্যাডোলেসেন্ট এন্ড ইয়ুথ ম্যানেজার ডা. ঈারভীন আক্তার এবং অ্যাডোলেসেন্ট এন্ড ইয়ুথ কোঅর্ডিনেটর, USAID সুখী জীবন পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল ঢাকা বশির আহমেদ।

এছাড়াও অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ এবং নেত্রকোণা থেকে আগত ভলান্টিয়ার পিয়ার লিডারগণ, 'সিরাক-বাংলাদেশ' এর উপ-পরিচালক প্রোগ্রাম, মোঃ সেলিম মিয়া, প্রোগ্রাম অফিসার সংগীতা সরকার, সিনিয়র ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাডমিন অফিসার মোঃ ওমর ফারুক খান, এসোসিয়েট প্রোগ্রাম অফিসার মাহমুদুল হক সুজন এবং এসোসিয়েট প্রোগ্রাম অফিসার লুৎফা পাঠান।

সভার শুরুতেই প্রকল্পের কার্যক্রমের উপর একটি তথ্যবহুল উপস্থাপনার মাধ্যমে 'সিরাক-বাংলাদেশ' এর প্রোগ্রাম অফিসার সংগীতা সরকার ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোণা জেলার নির্ধারিত ২০টি কৈশোর-বান্ধব তরুণ স্বেচ্ছাসেবীদের সংযুক্তির ফলপ্রসূতার চিত্র তুলে ধরেন শাহিনা আক্তার, ভলান্টিয়ার পিয়ার লিডার, খাগডহর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং মোনতাহার আরাফাত ভলান্টিয়ার পিয়ার লিডার, শহীদ শামসুন্নেসা আরজুমনি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র; বলেন, প্রকল্প শেষেও যেনো সরকারি ভাবে কৈশোর-বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কর্ণারটি খোলা থাকে যেনো কিশোর-কিশোরীরা তাদের প্রাপ্য সেবা গ্রহন করতে পারে।

সভায় ডাঃ মনজুর হোসেন বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ভলান্টিয়ার পিয়ার লিডারদের এই মডেলটিকে যেনো অপারেশনাল প্ল্যানে সংযুক্ত করা যায়। ভিপিএলরা অনেক ভালো কাজ করছে এবং তাদের এই কাজটিকে ধরে রাখতে হবে।

ডাঃ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, অধিদপ্তরের ১২শ এর অধিক কৈশোর-বান্ধব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তরুণ স্বেচ্ছাসেবীদের সংযুক্ত করার করতে ডিজি হেলথ এবং এমসিএইচ একত্রে কাজ করতে হবে। ভিপিএল দের এমনভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে যেন তারাই পরিপূর্ণ কাউন্সেলিং করতে সক্ষম হয়।

এস এম সৈকত বলেন, প্রকল্পের সফলতা থেকে অভিজ্ঞতা গ্রহণ করে সামনে এগিয়ে যেতে ওয়ার্ক পেপারের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাথে ৫ম সেক্টর প্লান এ প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদানের বিষয়টি প্রদান করা হবে বলে জানান এবং ভলান্টিয়ার পিয়ার লিডারদেও সার্টিফিকেট অনুমোদনের বিষয়টি তুলে ধরেন।

মো. মাহবুব উল-আলম বলেন, কিশোর-কিশোরীদের মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে কৈশোর-বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কর্ণার তৈরী, স্কুল প্রোগ্রাম, কমিউনিটি ক্যাম্পেইন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তথ্য ও সেবা পৌঁছে দেওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

মোঃ মাহাবুব আলম বলেন, ভিপিএলদের সঠিক তথ্য প্রদানের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। উপজেলা পর্যায়ে কাউন্সিলর টিম গঠন করার মাধ্যমে স্কুল, কলেজ ও প্রতিটি এলাকায় সেবা প্রদান করা যেতে পারে। সরকারী জনবলের মাধ্যমে স্কুল-কলেজের স্বাস্থ্য বিষয়ক টিম গঠন ও শিক্ষকদের সংযুক্ত করে কাজ করতে এবং এই উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নিতে মূল দায়িত্ব গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে স্মার্ট দেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

ডাঃ মোঃ মুনীরুজ্জামান সিদ্দীকী বলেন, ভলান্টিয়ার পিয়ার লিডারদেও সার্টিফিকেট প্রদানের বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে। সকল ইফনিট গুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে কৈশোর-বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে কাউন্সেলর নিয়োগ করতে হবে এবং ভলান্টিয়ার পিয়ার লিডারদের যথাযথ ক্লিনিক্যাল অরিয়েন্টেশন এবং ওয়ার্কশপের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।

সাহান আরা বানু (এনডিসি) বলেন, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা এশটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ৫ম সেক্টরের প্ল্যানিং পর্যায়ে আমরা আছি। উক্ত সভা থেকে উঠে আসা মতামত গুলোকে আমাদের মূল কার্যক্রমের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। ভলান্টিয়ার পিয়ার লিডাররা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন সেটিকে যেনো কাজে লাগয়ে এই কৈশোর-বান্ধব স্বাস্থ্যসেবার মান আরও বিস্তৃত করা যায় সে বিষয়ে আমরা চিন্তা করতে পারি।

উল্লেখ্য, ২০২১ সাল থেকে পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল এর কারগিরী সহযোগীতায় ও USAID সুখী জীবন প্রকল্পের অর্থায়নে যাত্রা শুরু করে ৪টি জেলায়-ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরাধীন নির্ধারিত ২০টি কৈশোর-বান্ধব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ২ (দুই) জন করে মোট ৪০ (চল্লিশ) জন ভলান্টিয়ার পিয়ার লিডার স্বেচ্ছাসেবীগণ নিয়োগের মাধ্যমে কিশোর কিশোরীদের তথ্য ও পরামর্শ সেবা প্রদান নির্ধারিত কেন্দ্রগুলোর আশেপাশের এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক কৈশোর-বান্ধব প্রজনন ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে আসছে সিরাক-বাংলাদেশে। সভায় তরুণদেও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার পর ২০২১ সাল থেকে আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত ঢাকা, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলায় ২৯২৩১ জন কিশোর-কিশোরীকে কৈশোর-বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা পেতে সাহায্য করেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুইজ কার্যক্রমের মাধ্যমে ৩৫ হাজারের অধিক কিশোর-কিশোরীদের বয়সন্ধিকালীন বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ বিষয়ক ৫০হাজার লিফলেট, ব্রশিয়র বিতরণ, স্কুল ও কমিউনিটিতে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ৮৮ হাজারের অধিক জনের কাছে কৈশোর-বান্ধব স্বাস্থ্যসেবার বার্তা পৌঁছেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কৈশোর- বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ভলান্টিয়ার পিয়ার লিডার এর কার্যক্রম চলমান রাখতে বিভিন্ন কেস স্টাডি, সাকসেস স্টোরি ও প্রকল্পের ডকুমেন্টেশন করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয় এবং ৫ম সেক্টর প্লানে ভলান্টিয়ার পিয়ার লিডারদের কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়।