অনলাইন ডেস্ক : বর্তমানে সিঙ্গেল ইউজ বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের এক বড় অংশ দখল করে আছে। গৃহকর্মের প্রয়োজনে, অফিসে-আদালতে, স্কুল-কলেজে, ফুড শপগুলোতে, ছোট-বড় সব অনুষ্ঠানে এখন খাবার সরবরাহের ঝামেলা এড়ানোর জন্য সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের পর আমরা যত্রতত্র ফেলে রাখি।

প্লাস্টিকের পাত্রে খাওয়া হয়ে গেলেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ ধরে নিয়ে রাস্তাতেই ফেলে দেই। আর চক্ষুলজ্জা থাকলে একটু আড়াল করে ড্রেনের মধ্যে বা কোনও একটা ফুটপাতের ফাটল দিয়ে ছেড়ে দিই। সামনে না দেখা গেলেই হলো। কিন্তু আসলেই কি দায় শেষ হলো? এ ধরনের প্লাস্টিক রিসাইকেল করা যায় না। এগুলো গিয়ে জমা হচ্ছে নদী-নালা, খাল-বিলে। এতে পরিবেশ দূষণের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, ঢাকার পানি বের হয়ে খালে পড়বে, সেই খাল নেই। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র বলছেন, আমরা লেকে-ড্রেনে-রাস্তায় যে প্লাস্টিকের ময়লা ফেলি সেগুলো তুলে এনে মেলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মানুষ যদি তার কৃতকর্ম নিয়ে তারপরে কিছুটা হলেও সচেতন হয়।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে পরিকল্পনা জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেন, আমরা চেয়েছি নানারকমভাবে করতে। কিন্তু মানুষ সচেতন না হলে কেবল অ্যাকশন দিয়ে কাজ হবে না। এর মধ্যে ড্রেন-লেক পরিষ্কার করার জন্য সাকার মেশিনের ব্যবস্থা করার পর দেখা গেছে বস্তার পর বস্তা প্লাস্টিকের বোতল। আমি নির্দেশ দিয়েছি, ১৮ নভেম্বর এই বর্জ্যগুলো দিয়ে মেলা করবো। শাড়ি কাপড়ের মেলা হয়, এবার ময়লার মেলা হবে। আমরা এই শহরটা থেকে কেবল নিচ্ছি, দিচ্ছি না কিছু। এইটুকু সচেতনতা আমাদের মধ্যে জন্মানো দরকার কিনা সেটা মানুষ এই মেলার ময়লা-আবর্জনা দেখেই সিদ্ধান্ত নিক। এই শহরটাকে বাসযোগ্য করতে হলে ভালোবাসতে হবে।

স্মল প্যাকেট উইথ হিউজ এনভায়রনমেন্ট ডেস্ট্রাকশন’ শিরোনামের একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো)। তারা বলছে, দেশে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ লাখ ৬০ হাজার টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয়েছে, যার মধ্যে ১ লাখ ৯২ হাজার ১০৪ টনই বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর মিনিপ্যাক (স্যাশে)। বাংলাদেশের মানুষ দৈনিক প্রায় ১৩ কোটি বা ১২৯ মিলিয়ন স্যাশে ব্যবহার করে। কিন্তু এই যে ব্যবহার করা প্লাস্টিক সেটা তারপরে কী করে?

এসডোর গবেষণা অনুসারে, প্লাস্টিকের স্যাশে পণ্যকে চার ভাগে ভাগ করা হয়। সেখানে দেখা গেছে, দেশে উৎপন্ন মোট প্লাস্টিক ব্যাগের ৪০ শতাংশ খাদ্যসামগ্রী থেকে তৈরি হয়, এরপরে প্রসাধনী পণ্য (২৪ শতাংশ), ওষুধ (৪ শতাংশ), পানীয়, ঘর পরিষ্কারের পণ্য, রান্নার উপাদান ৭ শতাংশ ছাড়াও অন্যান্য সামগ্রী রয়েছে। ৪০ শতাংশ খাবারের স্যাশের মধ্যে আছে চিপস, টমেটো সস, জুস এবং গুঁড়ো দুধ, কফি ইত্যাদি। ওষুধের স্যাশের মধ্যে আছে স্যালাইনের প্যাকেট এবং মেডিসিন স্ট্রিপ। কসমেটিক স্যাশের মধ্যে আছে শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, টুথপেস্ট ও মাউথ ফ্রেশনার। রান্নার উপাদানগুলো মসলা প্যাকের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, প্লাস্টিকের মিনি প্যাকেট পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক।