=আকিব শিকদার=

শখ করে একখানা পান খেয়ে বাসে উঠেছিলাম। জানালা দিয়ে পানের পিক ফেলতে গিয়ে এক স্টাইলিশ সুন্দরী মেয়ের মাথার সিঁথি বরাবর পড়ে যায়।

মাথায় হাত দিয়ে সুন্দরী মুখ ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখি সিঁথি বেয়ে টুপ টুপ করে পানের পিক তার নাকে মুখে পড়ছে। তা দেখে সুন্দরী রেগে মেগে আগুন হয়ে বাসের দরজার দিকে তেড়ে আসছে।

এদিকে তো ভয়ে আমার হাঁটু কাপছে। তাড়াহুড়ো করে পানি দিয়ে কুলি করে টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে ফ্রেশ হয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে সিটে হেলান দিয়ে আরামছে চোখ বন্ধ ঘুমের ভং ধরলাম।

সামনের সিটেই এক ভদ্র মহিলা পান চিবুচ্ছিলেন। মেয়েটা এসে সরাসরি ভদ্র মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “এই বেয়াদ্দপ মহিলা, তুই আমার মাথায় পানের পিক ফেললি কেনো?”

তা শুনে ভদ্র মহিলা মেয়েটার গালে ঠাস করে দুইটা থাপ্পর বসিয়ে দিয়ে বললেন, “এই ডিস্কু মাইয়া, কাকে বেয়াদ্দপ মহিলা বলছিস? ঘোড়ার লেজের মতো চুল কালার করে চোখে সরষে ফুল দেখে উল্টাপাল্টা বকছিস কেনো, নাকি গাঞ্জা টাঞ্জা কিছু খাস!”

প্রতিউত্তরে মেয়েটা কিছু না বলে ডিরেক্ট মহিলাটার চুল ধরলো। মহিলা তো ছেড়ে দেবার লোক নয়, উনিও মেয়েটার চুলের মুঠি ধরলো।

এদিকে বাসে থাকা সকল লোকজন দুজনের চুল টানাটানির দৃশ্য আরামছে উপভোগ করছিলো। মাঝখান থেকে ভদ্র মহিলার কোলে থাকা চার বছরের একটা বাচ্চা ওই ঝগড়া করতে আসা মেয়েটার গালে কামড় বসিয়ে দিলো।

পরিস্থিতি তখন ভয়াবহ, তবুও কেউ থামাতে আসছে না। শেষমেষ আমিই দুজনের মাঝখানে ঢুকে থামাতে গেলে দুজনে আমার শার্ট ছিড়ে ফাতা ফাতা করে ফেললো।

মানবতার খাতিরে তবুও থেমে থাকতে পারলাম না। দুজনের একজনকে তো আগে থামাতে হবে। তাই মহিলাকে টেনে ধরেছিলাম। ওদিকে বাচ্চাটাকে একা পেয়ে কামড়ের প্রতিশোধ নিতে মেয়েটি কামড় দেয়ার জন্যে বাচ্চার দিকে এগুচ্ছে। যেই বাচ্চার গালে কামড় বসাতে গেলো, ওমনি বাচ্চাটাকে টান দিয়ে সরিয়ে নিয়ে বাচ্চার গালের জায়গায় আমার গাল পেতে দিলাম। যার ফলাফল আমার গালে আটাশটি দাতের ছাপ পড়ে গেলো।

এবার পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হতে শুরু করলো। মেয়েটি “সরি” বলে বারবার আমার হাত ধরে মাফ চাচ্ছিলো। আমি তো বাপু নরম মনের মানুষ। নেগেটিভলি না নিয়ে পজেটিভলি নিয়ে ভাবলাম, কামড় দিয়েছে তাতে কি! সুন্দরী মেয়ের ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়েছি এটাই অনেক। এটা ভেবে মাফ করে দিয়ে বললাম, “ঠিক আছে।”

তারপর মেয়েটি আমার হাত ধরে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করে ফোন নাম্বার দিয়ে বলেছিলো, দরকার হলে কল দিতে। ব্যাস, এখন আমরা সাড়ে চার বছর ধরে রিলেশনশিপে আছি।