মাজহারুল ইসলাম মিশু : ময়মনসিংহের সিমান্তবর্তী হালুয়াঘাট উপজেলায় হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক আনোয়ার হোসেন। বাহারি জাতের ফুলকপি চাষ করে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছেন এ কৃষক। প্রতিদিনই তার এখানে হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপি দেখতে ও কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। আকারে সাধারণ সাদা ফুলকপির চেয়ে আলাদা ও দামেও বেশি এসব ফুলকপি থেকে লাভবানও হচ্ছেন তিনি।
কৃষক আনোয়ার হোসেন উপজেলার গাজিরভিটা ইউনিয়নের প্রশ্চিম সমনিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা। গত বছরের অক্টোবর মাসে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান নয়ন এর পরামর্শ ও সহযোগিতায় উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি। প্রশিক্ষণ শেষে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় রঙিন ১হাজার ১শত চারা গাছ এনে ৩০ শতক জমিতে রোপণ করেন।
এ বিষয়ে কৃষক আনোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে আমি কৃষি কাজের সাথে জড়িত। আমাদের এখানে যে জমি তাতে বোরো আবাদ করতে অনেক খরচ এর প্রয়োজন। বিশেষ করে পানির সমস্যা বেশী। ফলে বোরো আবাদে লাভের চেয়ে খরচ বেশী। বোরো ধান আবাদের পাশাপাশি জমিতে নতুন নতুন ফসল কিভাবে আবাদ করা যায় সে বিষয়ে আমি কৃষি অফিসের পরামর্শে প্রতিবছর নতুন নতুন সবজি আবাদ করি। এর আগে আমি সূর্যমুখী ফুল চাষ করে লাভবান হয়েছি।
আমাদের ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান নয়ন আমাকে এবার রঙিন ফুলকপি চাষের পরামর্শ দিলেন। প্রথমে বেশ চিন্তায় ছিলাম, আমাদের এই এলাকায় এই জাতের ফুলকপি কি বিক্রি করতে পারবো? প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর আমার সে ধারণা পাল্টে গেছে। সবে মাত্র আমার ক্ষেতে ফুলকপি ফুটতে শুরু করেছে। বাগান থেকেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ফুলকপি। এখন বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা আমার রোপনকৃত ফুলকপি কিনতে অগ্রিম টাকা দিতে চাচ্ছে। বাজারে যেখানে সাধারণ ফুলকপি ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয় সেখানে বাগান থেকেই আমি রঙিন ফুলকপিগুলো ৬০ থেকে ৭০ টাকা দাম পাচ্ছি।
৩০ শতক জমিতে দুই রকমের ফুলকপি চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৭ হাজার টাকার মতো। এই কপি চাষে পরিশ্রম কম বলে নিজেই চাষ করেছি। আশা করছি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মতো ফুলকপি বিক্রি করতে পারবো। আমার জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ দেখে এলাকার কৃষকরা বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আমার সাথে অনেকেই যোগাযোগ করছেন, আগামী বছর বাহারি রঙের ফুলকপি চাষ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চীন এর মানুষ সালাদ হিসেবে বাহারি রঙের ফুলকপি খেয়ে থাকেন। সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপির পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। বাজারেও রয়েছে এর প্রচুর চাহিদা। দেখতে আকর্ষনীয় সুন্দর এ কপি অর্ধসিদ্ধ করেই খাওয়া যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় উচ্চমূল্যের ফসল আবাদ প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে হালুয়াঘাটে কৃষক আনোয়ার হোসেনকে রঙিন ফুলকপি চাষের জন্য দেওয়া হয়েছে। চারা রোপণের ৭০-৮০ দিনের মধ্যেই কপি বিক্রি করা যায়।
প্রতিটি কপি ফুল হওয়ার ৭ দিনের মাথায় বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠে। একেকটি কপির ওজন হয় ১ থেকে েেদড় কেজি। পরিবেশ বান্ধব জৈব সার ব্যবহার করেই কপির ফলন বৃদ্ধি করা যায়। ফলে উৎপাদন খরচ একদম কম।
রঙিন কপির বাগান দেখতে আসা হালুয়াঘাটের ধারা এলাকার সাইদুর রহমান রাজু বলেন, এই বাগান দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। প্রথমবার এমন বাহারি রঙের ফুলকপি দেখলাম। কৃষক ভাইয়ের কাছ থেকে ১টি হলুদ ও বেগুনি রংয়ের ফুলকপি কিনে নিলাম। আসলে বাহারি ফুলকপি দেখতে বেশ ভালো লাগছে।
গাজিরভিটা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান নয়ন বলেন, কৃষক আনোয়ার হোসেন একজন সফল ব্যাতিক্রমধর্মী চিন্তার সফল কৃষক। নতুন নতুন জাতের ফসলের প্রতি তার ব্যাপক আগ্রহ। আমি তাকে পরামর্শ দেই রঙিন ফুলকপি চাষের। এ বিষয়ে কৃষি অফিস থেকে তার প্রশিক্ষণ ও চারার ব্যবস্থা করে দেই। সফলতা আসায় আগামীতে এ অঞ্চলে অনেক চাষী আমার কাছে এ সবজিটি চাষ করার জন্য সহযোগীতা চেয়েছেন। আশাকরি আগামীতে এ অঞ্চলে এর চাষাবাদ বৃদ্ধি পাবে।
হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বলেন, প্রথমবার কৃষক আনোয়ার হোসেন হালুয়াঘাটে বাহারি রঙের ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন। আমি উনার বাগান থেকে কিছু ফুলকপি ক্রয় করে এনেছি। উনার দেখাদেখি এলাকার অন্য কৃষকদের মাঝেও রঙিন ফুলকপি চাষে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে। রঙিন ফুলকপিতে মানবদেহে উপকারী বিভিন্ন উপাদান রয়েছে। আশাকরছি সামনে বছর এ উপজেলায় ব্যাপকভাবে এর আবাদ হবে।