নিজস্ব সংবাদদাতা : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপালন অনুষদের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত অটোরিকশাচালক মোশাররফ হোসেন (২৩) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার (১২ ফেব্র“য়ারি) দুপুরে তাকে নগরীর কেওয়াটখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে অটোরিকশাটি আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানা ওসি মাইন উদ্দিন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান নাজমুল ইসলাম বাদী হয়ে থানাযয় একটি অভিযোগ দায়ের করার পরই অভিযান শুরু করে পুলিশ। অটোরিকশাচালক মোশাররফ হোসেনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। সে নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার নাটেরকোনা গ্রামের হাবিবুল্লাহর ছেলে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএনজিচালকের হাতে ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ওই বিক্ষোভে শিক্ষকদের গালাগালি ও অসম্মানের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি।
রোববার (১১ ফেব্র“য়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় পশুপালন অনুষদের গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গালাগালি ও অসম্মান করার অভিযোগ ওঠে।
পরবর্তীতে প্রশাসনিক ভবনের তালা খুলে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় বসেন শিক্ষার্থীরা। আলোচনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট রাস্তা ব্যতীত সিএনজি, অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা এবং রিকশাগুলোর নির্ধারিত কোড ও রিকশাচালকের নির্দিষ্ট পোশাকের ব্যবস্থা করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মের রাস্তাগুলিতে অবিলম্বে নিরাপত্তা জোরদার করা এবং গত দিনের ঘটে যাওয়া ঘটনার অবিলম্বে বিচার করা।
এদিকে বিক্ষোভ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গালাগালি ও অসম্মান করার অভিযোগ তুলে এদিন বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা একযোগে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের স্লোগান ছিল ‘আমার বোন লাঞ্ছিত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’; ‘বোবা প্রশাসনের টনক নড়বে কবে?’; ‘সিসিটিভি আছে, ফুটেজ নাই, ক্যাম্পাসে বহিরাগত কেন?’ এমন। স্লোগানের মাধ্যমে তারা তাদের আওয়াজ তুলেছেন। শিক্ষকদের কোনো ধরনের গালাগাল বা অসম্মান তারা করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম বলেন, যেখানে শিক্ষকদের সম্মান নেই সেখানে আমাদের কাজ করা অসম্ভব। আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করে গালিগালাজ করেছে। আমরা প্রক্টরিয়াল বডির (প্রক্টর এবং সহকারী প্রক্টরবৃন্দ) সদস্যরা স্বাক্ষর করে একযোগে পদত্যাগপত্র প্রক্টরিয়াল অফিসে জমা দিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশপথগুলোতে নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে সংযোগ জোরদার করার জন্য সাধারণ নম্বর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মের রাস্তাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে এবং শ্লীলতাহানির এই ঘটনার উপযুক্ত বিচারের জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তারা দ্রুতই ব্যবস্থা নেবেন।
প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ পত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রক্টর এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এটি সাময়িক সমস্যা। বিষয়টির সমাধান করা হচ্ছে। দু’একদিনের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তারা আবারও তাদের কর্মস্থলে যোগদান করবেন।
উল্লেখ্য, গত ৯ ফেব্র“য়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল জব্বারের মোড় হতে শাহজালাল পশুপুষ্টি মাঠ গবেষণাগার সংলগ্ন রাস্তায় অটোরিকশাচালক কর্তৃক শ্লীলতাহানির শিকার হন পশুপালন অনুষদের তৃতীয় বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় রোববার দুপুরে আন্দোলনে নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।