স্টাফ রিপোর্টার : ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের দিলালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এনআইডি কার্ডে বয়স কমিয়ে নৈশ প্রহরী পদে নিয়োগ দিয়েছে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি।
তাছাড়া ৫ টি পদে নিয়োগ দিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্যসহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে ম্যানেজিং কমিটির লোকজনের বিরুদ্ধে।
জানাগেছে, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহ দিদারুল ইসলামের ভাতিজা মো. সুমন মিয়াকে মো. সুমন ফকির নামে দিলালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী পদে চাকুরী দেয়। তবে সুমন মিয়া সিংরইল ইউনিয়নের নগরকুচুরী গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা এবং এনআইডি অনুযায়ী তাঁর নাম মো: সুমন মিয়া, পিতা- মৃত মো: ছোয়াদ আলী ফকির, মাতা- জুবেদা খাতুন। যেখানে ২০০৮ সনে প্রস্তুতকৃত ৬১১৭২৬৩৩২৯৭৭২ নং এনআইডি অনুযায়ী সুমন মিয়ার বর্তমান বয়স ৪২ বছর।
সরকারি বিধি মোতাবেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী যোগদানে সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ এর উর্ধ্বে নয়। কিন্তু গত এক বছর পূর্বে সুমন মিয়া তাঁর চাকুরীর জন্য মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মো: সুমন মিয়া থেকে মো: সুমন ফকির নামকরণ করে কিশোরগঞ্জস্থ জেলার তাড়াইল উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের সিংগরুরপাড় গ্রামের বাসিন্দা হিসাবে নতুন এনআইডি তৈরী করে। যেখানে ২০২২ সনে নতুন এনআইডি নং ১০৩৪৭৩২২২৮৭ অনুযায়ী তাঁর নাম মো: সুমন ফকির, পিতা- মৃত ছোয়াদ আলী ফকির, মোছা: জুবেদা খাতুন। এতে নতুন এনআইডি অনুযায়ী তাঁর বয়স ৩৩ বছর দেখানো হয়েছে। সরকারি বিধি মোতাবেক একই ব্যক্তি দুটি স্থানের ভোটার বা নাগরিকত্ব দেখাতে পারে না, তা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
বিদ্যালয়ের সভাপতি দিদারুল ইসলাম একজন তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারী হয়েও সাবেক এমপির ডিও লেটারের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
নির্বাচিত হওয়ার পরপরই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিনকে বাধ্যতামূলক দুই মাসের ছুটি দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দিয়ে রেজুলেশন করে দুই লাখ করে তিনজন ব্যক্তির নিকট থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়ে তাদেরকে আজীবন দাতা সদস্য করে নেয়। ওই টাকা বিদ্যালয়ের ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমা না দিয়ে বিভিন্ন ভাউচার দেখিয়ে খরচা খাতায় লিপিবদ্ধ করে।
এছাড়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে চাপের মুখে জিম্মি করে পাচঁটি জনবল নিয়োগে অর্ধকোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্য করে যা সর্বমহলে প্রচারিত ও এলাকার জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে সরেজমিন তদন্তপূর্বক নিয়োগ বাণিজ্য, অনিয়ম ও দূর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অত্র বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম, আব্দুল হাই ও সাবেক সদস্য মইন আহম্মদ খান সহ এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করে অভিযোগপত্র দায়ের করেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, এখানে আমার কিছুই করার ছিল না। নৈশ প্রহরী সুমন মিয়ার সাথে যোগাযাগ করা হলে এ ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি দিদারুল ইসলাম তাঁর বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রমাণ করে দেখাক।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, একই ব্যাক্তির দুটি আইডি কার্ড কি না ? তা আমার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরুণ কৃষ্ণ পাল বলেন, একটি অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।