কলমাকান্দা প্রতিনিধি: নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী সন্যাসীপাড়া গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত মহাদেও নদীতে বিদ্যমান ‘ওমরগাঁও, হাসনায়াগাঁও ও বিশাউতি’ নামক বালুমহালের ইজারা সংক্রান্ত কার্যক্রমের উপর এক মাসের স্থগিতাদেশ প্রদান করেছেন উচ্চ আদালত। একইসাথে আগামী এক মাসের মধ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কর্তৃক হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ সম্পন্ন করে নেত্রকোণা জেলা প্রশাসককে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশনা প্রদান করেন আদালত।
রোববার হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহ তাদের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ ২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত জনস্বার্থে মামলায় (নং-৪৫৬৩/২০২২) মহাদেও নদীর বালু মহালের ওপর এ নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
এ মামলার বিবাদী পক্ষ হলেন- ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কমিশানার এবং নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক ও কলমাকান্দার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাড. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং তাঁকে সহযোগিতা করেন অ্যাড. এস. হাসানুল বান্না।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে অ্যাড. এস. হাসানুল বান্না সাংবাদিকদের জানান , বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) নেত্রকোনার কলমাকান্দার রংছাতি ইউনিয়নের সন্যাসীপাড়া গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত মহাদেও নদীতে বিদ্যমান ‘ওমরাগাঁও, হাসনায়াগাঁও ও বিশাউতি’ নামক বালুমহালের ইজারা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে হাইকোর্ট বিভাগে ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল জনস্বার্থে মামলা দায়ের করে। মামলার প্রাথমিক শুনানী শেষে ওই বছরের ১৩ জুন মহামান্য আদালত মহাদেও নদী, নদী সংলগ্ন ফসলি জমি, স্থানীয় বাজার, বসত বাড়ি, বাগান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বৃক্ষাদি রক্ষার ব্যর্থতা সংবিধান ও দেশে প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন বিধায় তা কেন আইনবহির্ভুত, আইনী কর্তৃত্ববিহীন ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিবাদীগণের উপর রুল জারি করেন। একইসাথে বালু উত্তোলনের ফলে মহাদেও নদী, নদীর প্রতিবেশগত ব্যবস্থা ও সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসীর সম্পদের যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ধারা ৭ অনুযায়ী নিরুপণের ও ইজারা গ্রহীতাসহ দোষী ব্যক্তির নিকট হতে আদায়ের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না এবং কেন মহাদেও নদীকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা ও এর যথাযথ ব্যবস্থাপনার নির্দেশ প্রদান করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন মহামান্য আদালত।
সেইসাথে মহামান্য আদালত জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও নেত্রকোনার সহকারি পরিচালককে মহাদেও নদীর অবস্থা সম্বলিত প্রতিবেদন প্রস্তুত ও ৯০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন।
আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নকল্পে ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর, ৩১.৪৫.৭২০০.০০৮.৩৩.২০১.২০-২৪৬৯নং স্মারকবাহী পত্রের মাধ্যমে মহাদেও নদীতে বালু উত্তোলন সংক্রান্ত ইজারা বাতিল করা হয়। সম্প্রতি কোনোরূপ হাইডোগ্রাফিক ও ভূতাত্ত্বিক সার্ভে, পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব নিরুপণ না করেই চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি মহাদেও নদীতে বিদ্যমান মামলাভুক্ত ‘ওমরাগাঁও, হাসনায়াগাঁও ও বিশাউতি’ নামক বালুমহাল ইজারার উদ্দেশ্যে দরপত্র আহবান করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে বেলা ইজারা দরপত্রের কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে মহামান্য আদালতে আবেদন দাখিল করে। আবেদনের শুনানী শেষে রবিবার আদালত মহাদেও নদীতে বিদ্যমান ‘ওমরাগাঁও, হাসনায়াগাঁও ও বিশাউতি’ নামক বালুমহালের ইজারা দরপত্র সংক্রান্ত সকল কার্যক্রমের উপর এক মাসের স্থগিতাদেশ প্রদান করেন বলে জানান বেলার আইনজীবি এস. হাসানুল বান্না।
এবিষয়ে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ সাংবাদিকদের বলেন, আদেশের কপি হাতে পায়নি। হাতে পেলে মহামন্য হাইকোর্ট যে নির্দেশনা প্রদান করবেন সে মোতাবেক আদেশ পালন করা হবে।