নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি: শেরপুর জেলার কৃতি সন্তান, সাংবাদিকতা জগতের অন্যতম দিকপাল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ‘সংবাদ’ সম্পাদক, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরীর স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমানের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী ২৬ ফেব্র“য়ারি। ২০০৮ সালের এই দিনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এ উপলক্ষে সোমবার সকালে বজলুর রহমানের সহধর্মিণী সংসদ উপনেতা ও শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরীসহ পরিবারের সদস্যবৃন্দ, বজলুর রহমান ফাউন্ডেশন এবং বিভিন্ন সংগঠন ঢাকার মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে বজলুর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে তার কবর জিয়ারত ও মরহুমের রুহের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এসময় শেরপুর-১ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ছানুয়ার হোসেন ছানু, নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম, নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মোশারফ হোসেনসহ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, ১৯৪১ সালের ৩ আগস্ট তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলার চরনিয়ামত গ্রামের আব্দুর রহমান মৌলভীর ঘর আলো করে জন্মগ্রহণ করেন বজলুর রহমান। স্থানীয় এক প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি পাশ করার পরে নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের গণপদ্দী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পরীক্ষা প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে ও বরিশালের বজ্রমহন কলেজে পড়ালেখা করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর ১৯৬১ সালে দৈনিক সংবাদে সহ-সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন তিনি। পরে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং সম্পাদক হন। সুস্থ ও সচেতন সমাজ নির্মাণে সাংবাদিকতাকে হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেন তিনি। তিনি ছিলেন নির্লোভ, স্বপ্রতিভায় আলোকিত কৃতী মানুষ।
বজলুর রহমান সাংবাদিকতা পেশার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যেমন তেমনি জাতীয় ক্রান্তিকালেও তিনি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ, তারও আগে ৬২’র ছাত্র আন্দোলন, ’৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৮-৬৯ এর গণঅভূত্থান, ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। ২০০৭-৮’র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধেও দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে। এছাড়াও ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ববাংলার মুক্তি সনদ ৬ দফা দাবি ঘোষণা করার পর বজলুর রহমান তা সক্রিয়ভাবে সমর্থন এবং এর পক্ষে সামগ্রিক জনমত গঠনে প্রচারাভিযান চালান।
বজলুর রহমান তার দীর্ঘ সফল পেশাগত জীবনে সংবাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ অলঙ্কৃত করা ছাড়াও সাংবাদিকতা পেশার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিচালনাগত দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি বাসস’র পরিচালনা পরিষদের সদস্য ছিলেন। এছাড়াও প্রেস ইনস্টিটিউট, প্রেস কাউন্সিলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এসব প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনের সময়ও তিনি তার আদর্শ এবং পেশার মর্যাদাকে সমুন্নত রেখেছেন। নিজ আদর্শকে সবার উর্ধে স্থান দিলেও তিনি মেধা, জ্ঞান ও যুক্তির মাধ্যমেই সবকিছু বিবেচনা করতেন। বজলুর রহমান সাংবাদিকতার আদর্শেও প্রতি যেমন সত্যনিষ্ঠ ছিলেন তেমনি জীবনের সত্য, সুন্দর ও মার্জিত বৈশিষ্ট্যগুলোও তার কর্মপ্রবাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন। ‘সংবাদ’ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি সাপ্তাহিক একতারও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখা বজলুর রহমান ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি রাত ৭টার সময় পুরান ঢাকার ওয়ারলেস গেইটে সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর সরকারি বাসভবনে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজধানী ঢাকার কার্ডিয়াক হাসপাতালে বিশেষ কেবিনে চিকিৎসা দেয়া অবস্থায় ২৬ ফেব্র“য়ারিতে তার মৃত্যু হয়। পরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।