গৌরীপুর প্রতিনিধি : নির্মাণাধীন নেত্রকোণা-ঈশ্বরগঞ্জ মহাসড়ক দিয়ে ভারতীয় অবৈধ পণ্য চোরাচালান ও তার আড়ালে মাদক পরিবহনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আর এ কাজে পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী মহল রীতিমতো প্রটোকল দিয়ে সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নেত্রকোণা জেলা শহর থেকে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মাওহা, শাহগঞ্জ বাজার, অচিন্তপুর ও বোকাইনগর ইউনিয়নের উপর দিয়ে ভারতীয় অবৈধ চিনি, বিভিন্ন ধরনের মসল্লা ও মাদক দ্রব্য পরিবহন করা হয়। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত ২০-২৫টি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান দিয়ে এসব চোরাই পণ্য পরিবহন করা হয়। এর সাথে জড়িত আছে স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রভাবশালী একটি চক্র।

রবিবার (৩ মার্চ) সকালে উপজেলার মাসিক আইন-শৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি গৌরীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন জুয়েল উত্থাপন করলে শুরু হয় ব্যাপক তোলপাড়, তোপের মুখে পড়েন থানার ওসি সুমন চন্দ্র রায়।

বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন- উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ সোহেল রানা, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ম. নুরুল ইসলাম, মাওহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আল ফারুক, অচিন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জায়েদুল ইসলাম, রামগোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন জনি প্রমুখ। এসময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোফাজ্জল হোসেন খান সভায় উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, নির্মাণাধীন মহাসড়কটি আজও উদ্বোধন হয়নি, তবে তার অপেক্ষায় থাকেনি চোরাকারবারিরা, বরং নিরাপদ পথ হিসেবে এ সড়কটি হয়ে উঠেছে তাদের প্রধান ট্রানজিট। ভারত থেকে চোরাই পথে সীমান্ত ফাঁকি দিয়ে আসা চিনি ও মসল্লার কোটি কোটি টাকার পণ্য ও মাদক নেত্রকোণা থেকে নতুন এই মহাসড়কে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান দিয়ে পাচার হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। আর এ পাচারে সহযোগিতা করছে পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, শাহগঞ্জ বাজারে ইলেকট্রনিকস পণ্য ব্যবসায়ী রানা, সুজন, লংকাখলা গ্রামের সুমন, শাহগঞ্জ বাজারের মনোহারি ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিনের দোকানে ভোর বেলা এসব ট্রাক থেকে প্রায়ই পণ্য নামাতে দেখা যায়। কোন সমস্যা হলে তারাই শেল্টার দিয়ে থাকেন। মোটা অংকের চুক্তিতে পণ্যসহ ট্রাকগুলোকে গৌরীপুরের সীমানা পার করে দেয় প্রভাবশালী আরেকটি মহল। তাঁরা আরও জানান- এসব ট্রাকের সামনে বা পিছনে প্রায়ই পুলিশের টহল গাড়ি বা মোটরসাইকেলে সাদা পোশাকের পুলিশ দেখা যায়।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে শাহগঞ্জ বাজারের মনোহারী ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন পরে দেখা করে বক্তব্য দিবেন বলে জানান। এছাড়া অভিযুক্ত অন্যদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গৌরীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন জুয়েল বলেন, এটা খুবই লজ্জাজনক বিষয়, গৌরীপুরের উপর দিয়ে পুলিশের প্রহরায় ভারতীয় চোরাই পণ্য ও মাদক পাচার হচ্ছে।

গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সুমন চন্দ্র রায় বলেন- অভিযোগটি সঠিক নয়, এসব চোরাই পণ্য পাচারের সাথে পুলিশের কোন সম্পর্ক নেই। পাচার বন্ধ করতে পুলিশ কঠোরভাবে কাজ করবে।

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ শাকিল আহমেদ জানান- চোরা চালান ও মাদকের ব্যাপারে প্রশাসন জিরোট্রলারেন্সে আছে। মাসিক আইন-শৃঙ্খলা সভায় যে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে, তা খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। পাচার বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় সবধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।