ভালুকা প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের ভালুকায় ৩টি আশ্রয়ন প্রকল্পের বেহাল দশা। আশ্রয়ন প্রকল্পের ব্যারাকের ঘর নির্মাণ হওয়ার পর অদ্যাবধি ব্যারাকগুলো পূনঃনির্মাণ ও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বর্তমানে ব্যারাকের সবগুলো ঘরের টিনের চালা ভেঙ্গে বসবাসে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলে ঘরের ভেতর পানিতে একাকার হয়ে
যায়। এদিকে হাতিবেড় আশ্রয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অর্ধশতাধিক ২২/২৫বছর বয়সি আকাশমনি ও মেহগনি গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, সরকার হতদরিদ্র ও ভূমিহীন পরিবারের জন্য ১৯৯৯সালে উপজেলার উথুরা ইউনিয়নেরহাতিবেড়,বনগাঁও ও ধলিকুড়ি মৌজায় ৪২.৩৭একর জমির উপর২২টি ব্যারাকে ২২০টিঘর সরকারী ভাবে নির্মাণ করা হয়। তৎকালীন অশ্রয়ন প্রকল্পে আশপাশে পতিত জমি ও পুকুর পারে সহস্ত্রাধিক ফলজ ও বনগাছ রূপন করা হয়। বর্তমানে গাছ গুলো বিশাল অকৃতি ধারণ করেছে।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা প্রশাসনের লোকজনকে অবগত না করেই বিনা টেন্ডারে হাতিবেড় আশ্রয়ন প্রকল্পের সভাপতি জসিম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামালগত১৫দিনে সে ওই প্রকল্পের আওতাধিন তিনটি ভিটা থেকে ২২/২৫বছর বয়সি অর্ধশতাধিক বড় বড় আকাশমনি ও মেহগনি গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন।
এছাড়াও তারা আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতাধিন পুকুরের মাছ ইচ্ছেমতো ধরে বিক্রি করে দেয় বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। আরও অভিযোগ রয়েছে,হাতিবেড় আশ্রয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি জসিম উদ্দিন জমির মালিক হয়েও আশ্রয়ন প্রকল্প ব্যারাকে ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন।
সরেজমিনে হাতিবেড় আশ্রয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করে দেখা যায়, ঘরগুলোর অবস্থা খুবই জরাজীর্ণঘরের আড়ার কাঠ, টিনের চালা ও বেড়া ভেঙ্গে গেছে। বৃষ্টি হলেই ঘরের ভেতরে পানি পড়ে। ব্যারাকের ঘরের অবস্থা বেহাল থাকায় যারা একটু সাবলম্বি তারা নিজ নিজ খরচে থাকার ঘর নির্মাণ করে নিচ্ছেন। বর্তমানে হাতিবেড় ব্যারাকের ১৪০টি ঘরের মাঝে ৩০/৩৫পরিবার অবস্থান করছেন। বাকিরা ব্যারাক ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন, কেউ সরকারের দেয়া ঋণের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন। বরাদ্দপ্রাপ্ত ছাড়াও পরিত্যক্ত ঘরে অনেকেই অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। ১৯৯৯সালে আশ্রয়ন প্রকল্পটি চালু হওয়ার সময় পরিবারের স্বামীও স্ত্রীর নামে ৮শতাংশ করে জমির দলিল করে দেয়া হয়। বিগত ২৫বছরে সেই দলিল সুবিধাভোগিরা অনেকেই পাননি। জমি পাওয়ার লোভে সেই সময় অনেকেই আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ নেন। কিছু দিন থাকার পর তারা ব্যারাক ছেড়ে চলে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব আশ্রয়ন প্রকল্পে ব্যাপারে হালনাগাদ পর্যন্ত কোনো তথ্য সরকারী দপ্তরে নেই। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও সমবায় কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে অশ্রয়ন প্রকল্প ৩টির তেমন কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
সরকারী অফিসের ২০১৮ সালের প্রাপ্ত হিসেব অনুযায়ী জানাযায়, তিনটি আশ্রয়ন প্রকল্পে ব্যারাক ২২টি, ঘর ২২০টি, খালি ৭৬টি জরাজীর্ণ ১৫৫টি, নলকূপ ২২টি, সচল ১০টি, নষ্ট ১০টি, টয়লেট ১১০টি, সচল ৭টি ও নষ্ট ১০৩টি।
হতিবেড় আশ্রয়ন প্রকল্পের আরেক সুবিধাভোগি হাওয়া বেগম জানান, তাঁর স্বামী আব্দুল মালেক দিন রাত বাজারে পড়ে থাকেন। তিনি সংসারের তেমন কোনো খোঁজখবর নেন না। ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়ে কাঠ কাবারি নষ্ট হয়ে গেছে। টয়েলেটের বেড়া পর্যন্ত নেই। পলিথিন দিয়ে বেড়া দিয়ে ব্যবহার করছেন। কয়েকটি গাছ বিক্রি করা হয়েছে, ঘর ও টয়লেট মেরামত করার জন্য।
হতিবেড় আশ্রয়ন প্রকল্পের ৭নম্বর ব্যারাকের সুবিধাভোগিমোঃ ফারুক মিয়া ওরফে কর্ণেলজানান, আশ্রয়ন প্রকল্পের সভাপতি ও সম্পাদক মিলেই গাছগুলো বিক্রি করেছেন।
হাতিবেড় আশ্রয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি জসিম উদ্দিন ৫০টি গাছ কেটে বিক্রির কথা স্বীকার করে জানান, বসবাসের অযোগ্য ঘরগুলো গাছ বিক্রির টাকার দিয়ে মেরামত করা হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, গাছ কাটার ব্যাপারে ইউএনও স্যারকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোছা ঃ নায়েমা তাবাচ্ছুম শাহ জানান, তার অফিসে আশ্রয়ন প্রকল্পের কোনো তথ্য নেই। তাছাড়া ওইসব প্রকল্পগুলো চালু হওয়ার পর সংস্কারের জন্য সরকারী ভাবে কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা অপরূপা মালকার জানান, ভালুকায় যোগদান করার পর থেকে এখনো পর্যন্ত আশ্রয়ন প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করা সম্ভব হয়নি। সুবিধা ভোগিদের মাঝে প্রথম পর্যায়ে ৪লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে।
সেই ঋণের টাকা উত্তোলন করে পূনঃরায় সুবিধা ভোগিদের মাঝে ঋণবিতরন করা হয়।হতিবেড় প্রকল্পের সুবিধাভোগিদের কাছ থেকে ঋণের কিস্তি আদায় করা যাচ্ছে না। অনেকেই ঋণ নিয়ে পালিয়ে গেছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলীনূর খান জানান, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। আশ্রয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে তিনি অবগত নন। বন বিভাগের সাথে কথা বলে জানাতে পারবেন।