নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা : যৌন হয়রানির ঘটনায় টানা নয়দিন ধরে চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও নম্বর টেম্পারিংয়ের অভিযোগে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক সাজন সাহা ও বিভাগীয় প্রধান রেজোয়ান আহমেদ শুভ্রের স্থায়ী বহিস্কার দাবীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে টায়ার পুড়িয়ে অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে অবরুদ্ধ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকেও।

এ ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ও ব্যাবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন শাহ এবং বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ন কবীর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ আদেশ জারি করা হয়।

একই সঙ্গে এ আদেশে আরও বলা হয়, মানবসম্পদ ও ব্যাবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে বিভাগীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বিভাগীয় প্রধানের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ আদেশে নাখোশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। যৌন হয়রানির ঘটনায় অভিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক সাজন শাহ এবং তাকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রর স্থায়ী বহিষ্কার চান শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঘটনার ১৩ দিনেও যৌন হয়রানির ঘটনায় বিচার না হওয়ায় এবং এখন পর্যন্ত গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ না করে তালবাহানা করার অভিযোগে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন তারা। এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসসিক ভবন, সব বিভাগের ফটক এবং ব্যাংকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেন।

এ ঘটনায় উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর তালাবদ্ধ প্রশাসনিক ভবনের ফটকে এসে আন্দোলনকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। এতে শিক্ষার্থীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। এতে মহাসড়কের দুই পাশের যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় ভোগান্তির মুখে পড়েছেন যাত্রীরা।

ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন খবরের সত্যতা নিশ্চিত বলেন, অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে অরবোধ তুলে নেওয়া হয়।

অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক ছাত্রীকে অনুপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষায় জরিমানা আদায়, নম্বর কম দেওয়া ও থিসিস পেপার আটকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ ওঠে মানবসম্পদ ও ব্যাবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন শাহর বিরুদ্ধে। এ ঘটনার বিচার দাবিতে গত ৪ মার্চ আন্দোলন শুরু করে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবি করেন ওই বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

media image
ছবি

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ট্রেজারার ড. আতাউর রহমানকে প্রধান করে ৫ মার্চ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু এ তদন্ত কমিটি গঠনের একদিন পর ৬ মার্চ আন্দোলনকারীরা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এসময় তারা ওই বিভাগের শিক্ষকদের নেমপ্লেট ভাচুর করেন ও বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির ঘটনায় প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলে তাকেও তদন্তের আওতায় আনার দাবি জানান। পরে দাবি মেনে তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন করে বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকেও তদন্তের আওতায় নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা।

উল্লেখ্য, গত ৪ মার্চ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে একই বিভাগের এক ছাত্রীসহ একাধিক নারী শিক্ষার্থীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।

ভুক্তভোগী ছাত্রী শিক্ষক সাজন সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, সাজন সাহা ২০১৯ সাল থেকেই তাকে বিভিন্ন ধরনের অশোভন মেসেজ দিতেন, মধ্যরাতে চা খেতে ডাকতেন। এছাড়াও নাম্বার টেম্পারিং এর অভিযোগ তুলেন ভুক্তভোগী।