ত্রিশাল প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের ত্রিশালে যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে নেই স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। নেই অনুমোদনের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। আছে শুধু দীর্ঘদিন আগে আবেদন করার রিসিভ কপি। অনেকেরই জানা নেই স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স করতে কি কি কাগজপত্র লাগে। এই পরিস্থিতিতে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে। অপরদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসের তথ্যমতে, ত্রিশালে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ২৩টি। বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী যে কয়েকজন নিজস্ব চিকিৎসক ও ডিপ্লোমা নার্সসহ জনবল থাকার কথা তা দু-একটা বাদে কোনোটিতেই নেই। অনেক ডায়াগনস্টিকে ভুয়া টেস্ট রিপোর্টে শুধু ডাক্তারের নাম ও সিল ব্যবহার করা হয়। এ কাজটি সুন্দর ভাবে সুকৌশলে কম্পিউটার অপারেটর করে থাকে। সকল রিপোর্টের ৬০% নমুনা কম্পিউটারে ফাইল করা থাকে, প্রিন্ট করে সিল মেরে রোগীর হাতে তুলে দেয়। অনেক প্রতিষ্ঠানে স্বশরীরে ডাক্তার উপস্থিত থাকেনা। তবে তাদের নামে চলছে চিকিৎসা বানিজ্য। এই অবস্থায় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের উপর নির্ভরশীল এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলছে প্রশাসনের নাকের ডগাতেই।

অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেই প্যাথলজিস্ট, টেকনিশিয়ান ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। এরপরও বছরের পর বছর চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে কমিশন পাচ্ছে একটি সক্রীয় দালাল চক্র। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর সামনে সকাল ৮টা হইতে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক এর নিজস্ব প্রতিনিধি দালাল চক্রের নারী/পুরুষ এর উপচেপড়া ভীর জমে থাকে। ডাক্তারগণ রোগীদের হাতে ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার সাথে সাথে দালালচক্ররা টানাটানি শুরু করে। ফলে উন্নত চিকিৎসাসেবার নামে মানুষ ঠকানোর ব্যবসায় পরিণত হয়েছে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন সাধারন রোগীরা। ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাছাকাছি রয়েছে বেশ কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এদের নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। তারপরেও বীরদর্পে চলছে প্রতিষ্ঠানগুলো। ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দালালের মাধ্যমে রোগী ধরে এনে মানুষের শরীরের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে ।

কাগজপত্র না থাকার কথা স্বীকার করে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের পরিচালকগণ বলেন, আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছি। শুধু আবেদন করেই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন কিভাবে? এমন প্রশ্নে তারা বলেন- এটি ভুল হয়েছে।

পৌরসভার বাহিরে ইউনিয়ন পর্যায়েও রয়েছে আরো কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ঐসব প্রতিষ্ঠানেরও নেই স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। এছাড়াও দুই একটা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স আছে, তারাও বছরের পর বছর লাইসেন্স নবায়ন না করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছেন।এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ মেজবাবুল আলম বলেন, ত্রিশাল উপজেলায় রয়েছে ২৩টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বেশির ভাগেরই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। ছাড়পত্র না নিয়ে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান চালানোর কোনো সুযোগ নেই। জনবল সংকটের কারণে আমরা প্রতিনিয়ত এ বিষয়ে নজরদারি করতে পারছি না। তবে দ্রুতই অবৈধভাবে চলা প্রতিষ্ঠান গুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম জানান, উপজেলার সব ক'টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। যাদের লাইসেন্স নবায়ন নেই বা লাইসেন্স নেই, তাদের যথা শিগগিরই লাইসেন্স নবায়ন ও লাইসেন্স করতে বলা হয়েছে। তারা নির্দেশনা না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।