শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুর শহরের পৌরসভার মধ্য নওহাটা মহল্লার বাসিন্দা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকার নাগরিক আব্দুল হালিম ওরফে জীবন (৪৮) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সাথে জড়িত দুই নারীসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- শেরপুর সদর উপজেলার জংগলদী গ্রামের মোঃ ইলিয়াছ উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রউফ (৪৫), ডাকপাড়া গ্রামের মোঃ আবেদ আলীর ছেলে মোবারক ওরফে মোস্তাক (৩২), পূর্বশেরী মহল্লার মোঃ ফারুক আহাম্মদ এর স্ত্রী রুপা বেগম (২৮), কান্দা শেরীচর মহল্লার ফারুক হোসেনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম।

এছাড়াও গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে শেরপুর জেলার সদর উপজেলার ডাকপাড়া গ্রামের মোঃ আফিল উদ্দিনের ছেলে মোঃ রকিব হোসেন ওরফে জিহাদ (২০) ও মোঃ হযরত আলীর ছেলে মোঃ কালু মিয়া (২৫) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সোমবার দুপুরে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম পিপিএম-সেবা প্রেস ব্রিফিংয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বর্ণনা করে বলেন, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকার পার্সপোটধারী দ্বৈত নাগরিক আব্দুল হালিম জীবন। সে দীর্ঘ ২৫ বছর আমেরিকায় বসবাসের পর বিগত দুই বছর ধরে শেরপুর পৌরসভার মধ্য নওহাটা মহল্লায় বসবাস করে আসছিল।

আমেরিকায় বসবাস করা অবস্থায় জীব প্রথম বিয়ে করেন। পরবর্তীতে শেরপুর পৌরসভার চাঁপাতলী মহল্লায় আতিয়া নামে এক যুবতীকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন।

এদিকে দ্বিতীয় বিয়ে এবং পিতা-মাতার সাথে পারিবারিক বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরই জের ধরে আব্দুল হালিম জীবন তার পিতামাতার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা করেন এবং অপরদিকে তার পিতা সাইদুর রহমান ছেলে জীবনের বিরুদ্ধে ২টি মামলা দায়ের করেন।

এসব পাল্টাপাল্টি মামলার জের ধরে আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে তার আমেরিকান প্রবাসী আর এক ভাই এর বন্ধু শাহিনকে দিয়ে জীবনকে শায়েস্তা করতে বললে শাহিন তার ব্যবসায়ীক পার্টনার আব্দুর রউফকে দিয়ে জীবনকে শায়েস্তা এবং হত্যা করার পরিকল্পনা করে।

এরই প্রেক্ষিতে আব্দুর রউফ তার সহযোগী কালু, ময়নাল, জিহাদ ও মোবারকদের দিয়ে জীবনকে শায়েস্তা করার জন্য নির্দেশ দিলে কালু তার দুইজন পূর্ব পরিচিত মহিলা মনোয়ারা বেগম ও রুপা বেগমকে বিষয়টি জানায়। পরে রুপা বেগম জীবনের সাথে প্রেমের অভিনয় করে গত ৩০ মার্চ শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কৌশলে জীবনকে ডেকে নিয়ে যায় এবং তাকে একটি ঘরে আটক করে রাতে জীবনের মোবাইল ফোন থেকে তার ২য় স্ত্রী নিকট ৯৩ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরনের নাটক সাজানোর চেষ্টা করে।

পরবর্তীতে আসামীগণ জীবনকে শেরপুর সদর উপজেলার চুনিয়ারচর চর গ্রামের জনৈক গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ব্রহ্মপুত্র নদীর চরে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে মারপিট ও ছুরিকাঘাত করে নৃশংসভাবে হত্যা নিশ্চিত করে আসামীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং জীবনের সাথে ধস্তাধস্তিতে আসামী কালু ও জিহাদ আহত হয়। পরে তারা নিরাপদে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়।

এদিকে গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওই হাসপাতালে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে পুলিশ হেফাজতে চিহিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়াও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাকু উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ব্রিফিং কালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ খোরশেদ আলম (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ সাইদুর রহমান সহ শেরপুর জেলা পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আসামীদের সোমবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ।