নেত্রকোনা সংবাদদাতা : নেত্রকোনার মদনে বরের গাড়ি আটকে দেশীয় অস্ত্রে সবাইকে জিম্মি করে নগদ টাকা, স্বর্নালংকার ও স্মার্টফোন লুটের ঘটনায় চার ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত মালামালের একাংশ উদ্ধারেরো হয়েছে।

শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ। পুলিশ সুপারের সম্মলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এরআগে গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) দিবাগত রাত তিনটার দিকে জেলার মদন উপজেলার বাররী এলাকায় পাকা রাস্তার ওপর বরের গাড়ি আটকে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এছাড়া এদিন রাত ১১টার দিকে ডাকাতেরা কেন্দুয়া উপজেলার পাচহার এলাকায় মোটরসাইকলে থামিয়ে দুই আরোহীর কাছ থেকে ৩৩ হাজার টাকা লুট করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার অষ্টগ্রাম গ্রামের জাকির হোসেন (২৪), হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের মো. আরিফ হোসেন (২৯), একই জেলার চুনারুঘাট উপজেলার ভরমপুর গ্রামের মো. শাহীন আলম (৩৫) ও নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার শ্রীরামপাশা গ্রামের মো. বাবুন মিয়া (২৪)।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর এলাকার বর মো. মোবাশ্বের হোসেন কনে তুলে আনতে লোকজন নিয়ে গত সোমবার রাতে মাইক্রোবাসে করে শ্বশুর বাড়ি পাবনার উদ্দেশে রওনা হন। তাদের বহনকারী দুটি মাইক্রোবাসের প্রথমটি বাড়ি থেকে রওনা হয়ে রাত তিনটার দিকে উপজেলার বাররী এলাকায় একটি সেতুর কাছে পৌছলে ডাকতের কবলে পড়ে। ওই চার ডাকাত সেতুর উভয় পাশের পিলারে সাথে মাছ ধরার জাল দ্বারা বেধে রাখে এবং রাস্তার মাঝে একটি হ্যান্ডট্রলি দাড় করিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়। এতে মাইক্রোবাসটির গতিরোধ করে ডাকাতরা লাঠি ও দা দিয়ে আঘাত করে মাইক্রোবাসের ডান পাশের গ্লাসে আঘাত করে ভেঙ্গে ফেলে। পরে মাইক্রোবাসের বাম পাশের দরজা খুলে দেশীয় অস্ত্রের মুখে বর ও সঙ্গে থাকা যাত্রীদের জিম্মি করে তিনটি স্মার্ট ফোন, একটি বাটন ফোন, ৭ ভরি ওজনের বিভিন্ন ধরনের সোনার গহনা ও নগদ ৬৩ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়।

পুলিশ সুপার আও জানান, ওই ডাকাতরা একদিন রাত ১১টার দিকে কেন্দুয়া উপজেলার পাচহার এলাকায় মোটরসাইকলে থামিয়ে দুই আরোহীর কাছ থেকে ৩৩ হাজার টাকা ও অপর এক মোটরসাইকলে থামিয়ে আরও ৮০০ লুট করে নেয়।

ঘটনা পুলিশকে জানালে মদন থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যৌথ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর কমলাপুর রেলষ্টেশন, শনির আখড়া ও কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে।

জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( বিশেষ শাখা) লুৎফুর রহমান বলেন, ঘটনার অভিযোগ পেয়ে মদন থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের একটি দল যৌথভাবে অভিযানে নামে। ঘটনার পরদিন রাতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান সনাক্তের পর প্রথমে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থেকে জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে লুণ্ঠিত একটি স্মার্ট ফোন ও নগদ ৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। জাকিরের দেয়া তথ্যে পরদিন বিকালে রাজধানীর শনির আখড়া সেতুর ওপর থেকে আরিফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যে রাজধানীর কমলাপুর রেলষ্টেশন থেকে শাহীন আলম ও বাবুন মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত আরও দুটি স্মার্টফোন উদ্ধার করা হয়। পরে বাবুন মিয়ার দেয়া তথ্যমতে আটপাড়ার তেলিগাতী বাজারের একটি সোনার দোকান থেকে দুই আনা দুই রতি গলিত সোনা উদ্ধার করা হয়। তাদের নিয়ে আলামত উদ্ধারে ঘটনাস্থল জেলার মদন উপজেলার বাররী এলাকায় যায় পুলিশ। সেখানে একটি ধান খেত থেকে ডাকাতিকালে ব্যবহৃত দুটি টর্চ লাইট, টি কাঠের হাতলযুক্ত দা, তাদের ব্যবহৃত পোষাক, মুখ বাধার গামছা উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে আদালতে পাঠানো হবে বলে জানান জেলা পুলিশের মুখপাত্র লুৎফুর রহমান।