মেহেদী হাসান আকন্দ: নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার পোগলা ইউনিয়নে গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) প্রকল্পের বরাদ্ধ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রকল্পের কাজ না করেই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: জাহাঙ্গীর আলম, পোগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক এবং প্রকল্পের সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য সাজ্জাদুজ্জামান খান প্রকল্পের বরাদ্দ আত্মসাৎ করেন।
জানা যায়, কলমাকান্দা উপজেলার পোগলা ইউনিয়নের পোগলা মাইজপাড়া হাশিমের বাড়ী হতে মাইজপাড়া শরাফ উদ্দিনের বাড়ী পর্যন্ত ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে গ্রামীন রাস্তা সংস্কারের জন্য ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টম্বর উপজেলা গ্রামিন অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: জাহাঙ্গীর আলম ও পোগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হকের স্বাক্ষরে অনুমোদন করা হয়। প্রকল্পের কমিটি অনুমোদনে কলমাকান্দা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার স্বাক্ষর থাকলেও তিনি প্রকল্পের বিষয়ে কিছুই জানেন না।
প্রকল্পের সভাপতি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাজ্জাদুজ্জামান খান প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ১৪৩৭১৯৮ এবং ১৪ নভেম্বর ১৪৩৪৮৮৬ নং চেকের মাধ্যমে দুই দফায় সমূদয় টাকা উত্তোলন করলেও প্রকল্পের বিষয়ে তিনিও কিছুই জানেন না।
পোগলা ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার মাইজপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাজেদা বেগম বলেন, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে গ্রামীন রাস্তা সংস্কারের জন্য মাইজপাড়া হাশিমের বাড়ী হতে শরাফ উদ্দিনের বাড়ী পর্যন্ত প্রকল্পের বিষয়ে তিনিও অবগত নন। অথচ মাইজপাড়া শরাফ উদ্দিনের বাড়ী সংলগ্নই সাজেদা বেগমের বাড়ী। সাজেদা বেগম আরো জানান, মাইজপাড়া হাশিমের বাড়ী হতে শরাফ উদ্দিনের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা ইতোপূর্বে অতি দরিদ্রের ৪০ দিনের কর্মসূচীর মাধ্যমে করা হয়েছে।
মাইজপাড়া হাশিমের বাড়ী হতে শরাফ উদ্দিনের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা মেম্বার রোকিয়া বেগম জানান, পোগলা মাইজপাড়া হাশিমের বাড়ী হতে মাইজপাড়া শরাফ উদ্দিনের বাড়ী পর্যন্ত ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে গ্রামীন রাস্তা সংস্কারের জন্য ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দের কোন প্রকার কাজ না করেই প্রকল্প কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ও চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক আত্মসাৎ করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় মাইজপাড়া গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিন তালুকদারের পুত্র মো: জামাল মিয়া (৫৫), দুলাল মিয়ার পুত্র শেফায়েত হোসেন (২৩), ফিরোজ তালুকদারের পুত্র মারুফ হোসেন তালুকদার (২৭), মনোহর তালুকদারের পুত্র রমজান আলী তালুকদার (৪৫), স্থানীয় মসজিদের ঈমাম মৃত মুক্তার হোসেনের পুত্র আব্দুর রাশিদ (৭৫), মৃত মুমির উদ্দিনের পুত্র সুরুজ আলী (৯০), হাশিমের চাচাতো ভাই মৌজ আলীর পুত্র রেজাউল করিম (৩৭) তারা প্রত্যেকেই বলেন, প্রায় এক বছর আগে অতি দরিদ্রের ৪০ দিনের কর্মসূচীর আওতায় মাইজপাড়া হাশিমের বাড়ী হতে মাইজপাড়া শরাফ উদ্দিনের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তায় মাটি কাটা হয়েছিল। এরপর এই রাস্তায় কোন কাজ করা হয়নি।
স্থানীয়রা দাবী করেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: জাহাঙ্গীর আলম, পোগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক এবং প্রকল্পের সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য সাজ্জাদুজ্জামান খান ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে গ্রামীন রাস্তা সংস্কারের জন্য হাশিমের বাড়ী হতে মাইজপাড়া শরাফ উদ্দিনের বাড়ী পর্যন্ত প্রকল্পের ভূয়া কাগজ-পত্র বানিয়ে বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেছে। তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানান।
পোগলা মাইজপাড়া হাশিমের বাড়ী হতে মাইজপাড়া শরাফ উদ্দিনের বাড়ী পর্যন্ত ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে গ্রামীন রাস্তা সংস্কারের জন্য ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: জাহাঙ্গীর আলম এবং প্রকল্পের সভাপতি সাজ্জাদুজ্জামান খান সরাসরি অস্বীকার করলেও ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয় স্বীকার করেন।
এবিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মুহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, পোগলা মাইজপাড়া হাশিমের বাড়ী হতে মাইজপাড়া শরাফ উদ্দিনের বাড়ী পর্যন্ত ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে গ্রামীন রাস্তা সংস্কারের জন্য ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দের কাজ না হয়ে থাকলে তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।