ভালুকা প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের ভালুকায় কাবিনের দুই সপ্তাহ পর ১০লাখ টাকা যৌতুক দাবি করায় এবং তা না দিলে বিয়েতে স্বামীর অস্বীকৃতির কারণে জায়েদা সুলতানা (১৮)নামে এক কলেজ ছাত্রী হোয়াটএপে স্বামী কিবরিয়াকে লাইভে থেকে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (১০জুন) ভোরে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় জাহেদা খাতুন মারাযান। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার উপজেলার পাচগাঁও গ্রামে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে ভালুকা মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পাচগাঁও গ্রামের জয়নাল আবেদীনের মেয়ে মল্লিকবাড়ি শহীদ নাজিম উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের মানবিক শাখার ছাত্রী জায়েদা সুলতানা সাথে পাশের বহুলী গ্রামের শাহাব উদ্দিনের ছেলে গোলাম কিবরিয়ার (মোবাইল মেকার) প্রথমে ৪ বছর পূর্বে এক বিয়ে বাড়িতে পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্রধরে মোবাইলে তাদের প্রেমের সম্পর্ক গভীর হয়ে ওঠে। গত ২৬মে ২০২৪ইং তারিখ জাহেদা কলেজে ক্লাস করার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন। তিনি কলেজে না গিয়ে কিবরিয়ার সাথে মোটরসাইকেল দিয়ে সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ফেরার পথে মল্লিকবাড়ি ব্রিজের উপর জাহেদার বড় ভাই জিকু ও জাহেদার সাথে দেখা হয়ে গেলে জিকু লোকজন নিয়ে মোটর সাইকেলসহ কিবরিয়াকে আটক করে মল্লিকবাড়ি ইউনিয়ন আ’লীগ কার্যালয়ে নিয়ে যায়।

সেখানে পাঁচগাও এলাকার ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম,মল্লিকবাড়ি ইউপি সদস্য শামছুল হক,স্থানীয় আ’লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম, ইসলাম উপস্থিতিতে কিবরিয়ার বড় ভাই কাইয়ুম মিয়া,জনি, রনি ওতার এক ভাবিসহ দুই পক্ষের লোকজনের সম্মতিতে স্থানীয় কাজী আবুল হোসেনের মাধ্যমে ২৬মে ২০২৪ইং সন্ধ্যায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার কাবিনা হয়।

কিন্তু কাবিনের পর থেকেই কিবরিয়া মোবাইলে জায়েদা সুলতানার কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন এবং বলা হয়, ওই টাকা না দিলে বিয়ে করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। বিষয়টি জাহেদা তার বড় ভাই জিকু মিয়াসহ পরিবারের সদস্যদের জানানোর পর হতদরিদ্র পরিবার এতো টাকা দিতে পারবেনা বলে অস্বীকৃতি জানায়।

এ নিয়ে জাহেদা দুইদিন খুবই মন খারাপ অবস্থায় থাকার পর রোববার (৯জুন) সন্ধ্যায় জায়েদা সুলতানা মোবাইলে হোয়াটএপ লাইভ থেকে কিবরিয়াকে ফোন দিয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করছেন।

এ সময় কিবরিয়া বুঝতে পেরে ফোন কেটে দিয়ে সে জাহেদার বড় ভাই জিকু মিয়াকে ফোনে বিষয়টি জানায়, জাহেদা বিষপান করছে, আপনারা খোঁজ নেন। পরে জিকু বাজার থেকে ফিরে দেখেন জাহেদা বিষপান করে ঘরে মেঝেতে পড়ে ছটফট করছে। এ সময় পরিবারের লোকজন জাহেদাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ভালুকা সরকারী হাসপাতাল ও পরে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর সোমবার (১০ জুন) ভোরে জায়েদা সুলতানা মারা যান।

জাহেদার বড় ভাই জিকু মিয়া জানান, তাদের পরিবারটি খুবই অস্বচ্ছল। তার এক মাত্র বোনের কাবিন হওয়ার পর ছেলে তাদের কাছে ১০লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে এবং টাকা না দিলে সে বিয়ে করবে না বলে তার বোনকে জানায়। কিন্তু এতো টাকা তাদের পরিবারের পক্ষে কোনো মতেই সম্ভব নয়। কাবিন হলেও টাকার জন্য তার বিয়ে হবেনা, বিষযটি তার বোন মেনে নিতে পারছিলোনা। তাই ছেলের সাথে মোবাইলে কথা বলতে বলেতে সে বিষপান করে এবং হাসপাতালে নেয়ার পর তার একমাত্র বোনটি মারা যায়।

মেয়ের বাবা জয়নাল আবেদীন জানান, যৌতুকের বিষয়টি তার মেয়ের কাছ থেকে জানতে পারেন। পরে তিনি ছেলেকে বলেছিলেন, মেয়েকে বিয়ে করে তার বাড়িতে তুলে নেয়ার পর যৌতুকের টাকা দিবেন। এ ঘটনায় ৪জনকে আসামী করে থানায় একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

কাজি আবুল হোসেন জানান, দুই সপ্তাহ আগে মেম্বারদের উপস্থিতে দুই পক্ষের লোকদের সম্মতিতে তার অফিসে ওই ছেলে মেয়ের ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার কাবিন হয়। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না।

মল্লিকবাড়ি ইউপি সদস্য শামছুল হক জানান, তাদের উপস্থিতেই দুই পরিবারের লোকজনের সম্মতিতে কাবিন হয়। ছেলে বলেছিলো, বিয়ে করে পরে মেয়েকে তুলে নিবে। কিন্তু যৌতুকের কারণে মেয়ের বিষপানে মারা যাওয়ার বিষয়টি খুবই দু:খজনক।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, জায়েদা তার প্রতিবেশি। তার চাচা মোতালেব মিয়া একজন গ্রাম পুলিশের সদস্য। বিষপানে আত্মহাত্যার বিষয়টি তিনি ওই মেয়ের চাচার কাছ থেকে মোবাইলে শুনেছেন। বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। বিয়ের আগেই মেয়ে পক্ষের কাছে ছেলের এতো টাকা যৌতুক দাবি করা উচিত হয়নি। তিনি ছেলের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি জানান।

ভালুকা মডেল থানার পরিদর্শক(ওসি) মোহাম্মদ শাহ্ কামাল আকন্দ জানান,আত্নহত্যার প্ররোচনায় একটি মামলা হয়েছে। আসামীদেরকে ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।