শেরপুর প্রতিনিধি: দুর্নীতি ও অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগে রবিউল ইসলাম নামে শেরপুরের এক সাবেক বন কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বনবিভাগ। রবিউল ইসলাম শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরি ফরেস্ট রেঞ্জে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘ সময় একই যায়গায় চাকরির কারনে গত তিন মাস আগে তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। তার যায়গায় নতুন কর্মকর্তা যোগদানের পরই ফাঁস হতে থাকে তার কর্মকান্ড। পরে গঠন করা হয় দুইটি আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি। প্রথমে গত মে সাসের ৭ তারিখে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর পরে একই মাসের ২৯ তারিখে প্রধান বন সংরক্ষন কর্মকর্তার অফিস থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ঠ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং একই দিনে প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়। এঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ময়মনসিংহের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ.ন.ম আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, কি পরিমাণের দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত শেষে জানা যাবে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে রবিউল ইসলাম বালিজুরি রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। তার বাড়ি পার্শবর্তী জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলায়। তিনি যোগদানের পরপরই বিভিন্ন দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পরেন। একই কর্মস্থলে ৮ বছর চাকুরি করেন তিনি। বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের এলাকার লোক হিসেবে চাকুরীকালীন সময়ে তিনি কাউকে কোনো প্রকার তোয়াক্কা করেননি বলে জানান স্থানীয়রা। তিনি ছিলেন একজন দাপুটে বন কর্মকর্তা। অভিযোগ রয়েছে, গত ৮ বছরে তিনি নানা দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণের অর্থের মালিক বনে গেছেন। তার এসব দুর্নীতির মধ্যে নিলামে কাঠ বিক্রির অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজের পকেটস্থ করেন। এভাবে তিনি গত ৮ বছরে একই কর্মস্থলে থেকে শুধু সরকারি অর্থই প্রায় ১০ কোটি টাকা হরিলুট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে স্থানিয়রা বলছেন এই তদন্ত কমিটিতে সরিষার মধ্যে ভূত রয়েছে। এই তদন্ত কমিটি দিয়ে সঠিক তদন্ত হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সামাজিক বনায়নের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন শেরপুরের এসএফএনটিসির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্টার আব্দুর রাজ্জাক কে এই কমিটিতে রাখায় কমিটি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে।
তার এসব অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ তদন্তের জন্য বিভাগীয়ভাবে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা হলেন, আহ্বায়ক নেত্রকোনার সহকারী বন সংরক্ষক এ এফ জি মোস্তফা, ময়মনসিংহের সহকারী বন সংরক্ষক সাদেকুল ইসলাম খান, ময়মনসিংহের উথুরা রেঞ্জ কর্মকর্তা আ.ছ.ম রিদুয়ানুল হক, রাংটিয়া ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল করিম, শেরপুরের এসএফএনটিসির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্টার আব্দুর রাজ্জাক। ইতোমধ্যেই এ তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছেন। গত ১০ বছরের রবিউল ইসলামের সকল কর্মকান্ডের তদন্ত করা হবে বলে জানান কমিটির কর্মকর্তারা।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে বন সম্প্রসারণ, জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, দারিদ্র্য বিমোচন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করার মিশন নিয়ে সামাজিক বনায়নে উপকারভোগীদের সম্পৃক্ত করেছে সরকার। এর আওতায় উপকারভোগীদের মাঝে ৪০.৭৭৫ কোটি টাকা ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। পাহাড়ে বসবাসকৃতদের আর্থসামাজিত উন্নয়নে বনাঞ্চল ও বনভূমি ব্যবস্থাপনার লক্ষে বন অধিদপ্তরের অনুন্নয়ন ও বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বন বাগান সৃজন, বনজ সম্পদ আহরন ও বনায়নের সম্পৃক্ত উপকারভোগীদের লভ্যাংশ বিতরন করছে। বর্তমানে বনবিভাগে সরকারী গেজেটভূক্ত মোট বনভূমির পরিমান ৭১,২৮৭.২১ একর।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের সহকারী বন সংরক্ষক ও তদন্ত কমিটির সদস্য সাদেকুল ইসলাম খান বলেন, তদন্ত চলমান অবস্থায় আমরা তদন্ত সংশ্লিষ্ট কোন তথ্য প্রদান করতে পারবো না। আমাদের তদন্ত প্রায় শেষের দিকে। দুই এক দিনের মধ্যে আমরা আমাদের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবো। এ ব্যাপারে বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম শেরপুরের বাইরে অবস্থান করায় তার সাথে দেখা করা ও মুঠোফোন বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।