বারহাট্টা সংবাদদাতা : নেত্রকোনা বারহাট্টা উপজেলায় এতিমের টাকা অভিনব কৌশলে উত্তোলন করে নিজের মত ব্যবহার করছে এক মাওলানা। মাওলানার নাম লুৎফুর রহমান। তিনি উপজেলা রায়পুর ইউনিয়নের রামপুর কান্দাপাড়া গ্রামের যুন নূরাইন বালিকা এতিমখানা ও মিয়া হোসেন এতিমখানার মুহতামিম। প্রতি বছর দুই প্রতিষ্ঠানে ৬৮ জন ক্যাপিটেশন প্রাপ্ত এতিমের নামে সমাজসেবা অফিস থেকে বরাদ্দ (প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা ) ১৬ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা উত্তোলন করে যাচ্ছে। একেই জায়গায় দুটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে এমন কর্মকান্ড করে চলছে মাওলানা লুৎফুর রহমান।
প্রথমেই যুন নুরাইন বালিকা এতিমখানা ও পরে ১০ শতাংশ জমি ওয়াকফ করে নিজ পিতার নামে একই জায়গায় মিয়া হোসেন এতিমখানা স্থাপন করে ব্যতিক্রমী এক কারবার শুরু করেছেন। কোন প্রতিষ্ঠানেই গ্রহনযোগ্য কোন কমিটি নেই। যানা যায় প্রতিষ্ঠান দুটি প্রাইভেট ভাবে পরিচালিত হলেও সাধারণের কাছ থেকে বিভিন্ন কায়দায় কওমী মাদ্রাসার মত চাঁদা তোলা হয়।
শুধু ক্যাপিটেশন বাবদ এই পর্যন্ত আনুমানিক ২ কোটি টাকা উত্তোলন করে নিজের মনমতো ব্যবহার করছে। প্রতিদিন বোডিংএর মধ্যে ১৫ জনের রান্নাবান্না হলেও তিনি ৪০ জনের হিসাব দিয়েছেন। অথচ তার বক্তব্য অনুযায়ী নেত্রকোনা গাবরাগাতী ইউনিয়নের ৪ জন, বারহাট্টা সদর ইউনিয়ন ও ডেমুরা গ্রামের ৪ জন কলমাকান্দা শুনই গ্রামের ১ জন মেয়ে (মোট ৯ জন) আবাসিকে থাকে। অন্যান্য ছাত্রীরা নিজ এলাকার হওয়ায় বাড়ি থেকে এসে ক্লাস করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় এলাকার বিভিন্ন ছেলে মেয়েদের বাবা মা থাকতেও এতিম বানিয়ে টাকা উত্তোলন করে যাচ্ছে মাওলানা লুৎফুর রহমান। তাদের মধ্যে অনেকেই বছরে একবারও মাদ্রাসায় আসে না। মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায় বালক শাখায় ১৫ জন ছেলে যোহরের নামাজ পরছে। অথচ মুহতামিমের বক্তব্য অনুযায়ী মাদ্রাসায় ছাত্র ভর্তি আছে ৬০ জন ।
ছাত্র ছাত্রী অভিভাবকদের কাছ থেকে জানা যায় প্রতিটি ছাত্রীর মাসিক বেতন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। গরীব হলে তাদের জন্য একটু কমবেশ করা হয়। শিক্ষক হিসেবে মাওলানা লুৎফুর রহমানের ২ ছেলে ও তাদের পরিবারের মহিলারা দায়িত্ব পালন করে। এছাড়া বাহিরের কয়েকজন শিক্ষকও আছে। তবে বহিরাগত শিক্ষক এসে বেশিদিন থাকতে পারে না বলেও প্রমান পাওয়া গেছে।
মাওলানা লুৎফুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তার মাদ্রাসায় ৩৫০ জন বালিকা ও ৬০জন বালক রয়েছে। মেয়ে এতিম কত জন আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়ে এতিম ৩০ জনের মত ও ছেলে এতিম ১৩ জনের মত রয়েছে। তিনি মোট ৪৩ জন এতিমের হিসাব দিলেও তাদের তালিকা দিতে তালবাহানা শুরু করেন। এবং এতিমখানার সভাপতির নাম্বারটি চাইলে দেই দিচ্ছি বলে আর ফোন ধরেনি।
৬৮ জন এতিমের মধ্যে নিজের জবানবন্দি অনুযায়ী ২৫ জন এতিমের হদিস মিলেনি। ২৫ জন এতিমের টাকা কার নামে উত্তোলন করে কি করছে তার কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
তথ্য অনুযায়ী প্রতিমাসে মহিলা মাদ্রাসা থেকে বেতন বাবদ প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা কালেকশন হয়। মোটা অংকের বেতন পাওয়ার পরও নামে-বেনামে কেন টাকা তুলেন,এটা কি আপনার অন্যায় মনে হয় না, এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন ভুলতো মানুষেরই হয়। তবে আমার এখানে অনেক অসহায় ছাত্র ছাত্রী আছে যাদের পিছনে আমি এই টাকা খরচ করি। মাঝেমধ্যে শিক্ষকের বেতন দিই। আপনার চেয়ে অনেক দুর্বল প্রতিষ্ঠান সরকারি ক্যাপিটেশন ছাড়াও চলছে, তাহলে আপনার এতিমের টাকা নিজের মত করে ব্যবহার করতে হয় কেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমিও আল্লাহর রহমতে চলতে পারবো। কিন্তু সরকারি সহযোগিতা যেহেতু পাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ।
মাওলানা মুফতি পিয়ার মাহমুদ এর সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন এটা অন্যায় এতিমের মাল কোন অবস্থাতেই অন্যখাতে ব্যবহার করা যাবে না। তবে বিষয়টি গণমাধ্যমে না এনে স্থানীয় উলামায়ে কেরামদের নিয়ে বসে একটা সমাধান দিলে ভাল হবে।
জানা যায়, বারহাট্টা উপজেলায় ১০০ শতর উপরে কওমী মাদ্রাসা রয়েছে। তার মধ্যে উপজেলায় মোট ৬ টি মাদ্রাসা ক্যাপিটেশনের আওতাভুক্ত। এই মাদ্রাসা গুলোতেই প্রতিবছর নাম বৃদ্ধি করা হয়। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কেন এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত এমন প্রশ্ন সবার।
বারহাট্টা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এস এম গোলাম হোসেন বলেন এমন অভিযোগ আমিও পাচ্ছি। এই সপ্তাহের মধ্যেই প্রতিটি ক্যাপিটেশন প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠাবো। যদি ভুয়া নাম ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন করছে এমন প্রমান পাওয়া যায় তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন আগামী বছরে ক্যাপিটেশন গ্রান্ট পেতে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। অন্যান্য ভাতার মতো এতিম দের নামও অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তখন আর কুচক্রী মহল এই সুবিধা পাবে না।