মেহেদী হাসান আকন্দ: মেয়েকে আত্মগোপনে রেখে জামাইয়ের বিরুদ্ধে হত্যা ও গুমের চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন করেছে নেত্রকোণা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

বুধবার বেলা সাড়ে ১২ টায় নেত্রকোণা পুলিশ ব্যুরো আব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর সম্মেলন কক্ষে প্রেস বিফিং এর মাধ্যমে এতথ্য নিশ্চিত করেন পিবিআই নেত্রকোণা কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: শাহীনুর কবির। এসময় উপস্থিত ছিলেন, ইন্সপেক্টর জাহিদ ও ইন্সপেক্টর অভিরঞ্জন।

প্রেস বিফিং এ জানানো হয়, নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দ্রলাড়া গ্রামের মৃত জয়নাল আবেদীনের পুত্র আব্দুল খালেক (৬০) বাদী হয়ে গত ২৩ এপ্রিল নেত্রকোণা বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে জামাতা একই উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের পুত্র মো: বিদ্যা মিয়া(৩৫) কে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/২০২০) এর ৫/১১(ক)/৩০ ধারায় কোর্ট পিটিশন করেন। বাদী অভিযোগে উল্লেখ করেন গত ১৮ এপ্রিল থেকে তার মেয়ে লিয়া আক্তার (২৭) নিখোজ রয়েছে। বাদীর অভিযোগ তার মেয়ের স্বামী বিদ্যা মিয়া কথিত ভিকটিম বাদীর মেয়ে লিয়া আক্তারকে অজ্ঞাত স্থানে পাচার করে হত্যা করে গুম করেছে। বিজ্ঞ আদালত নেত্রকোণা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশনা পেয়ে পিবিআই এর অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদারের দিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর কবীরের তত্ত্বাবধানে এস আই (নিরস্ত্র) মো: আমিনুজ্জামান অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৭ সেপ্টম্বর কেন্দুয়া উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের পুত্র মো: বিদ্যা মিয়া’র সাথে অভিযোগকারী একই উপজেলার চন্দ্রলাড়া গ্রামের মৃত জয়নাল আবেদীনের পুত্র আব্দুল খালেক এর মেয়ে লিয়া আক্তারের পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। বিবাহের পর তাদের ঔরষে ৬ বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। গত ১৮ এপ্রিল বাদী তার মেয়ে কথিত ভিকটিম লিয়া আক্তারকে আত্মগোপনে রেখে জামাই বিদ্যা মিয়ার বিরুদ্ধে নেত্রকোণা বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেন। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যেই অপরাধ তদন্ত, অপরাধী সনাক্ত এবং কথিত ভিকটিমকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় নেত্রকোণা পুলিশ ব্যুরো আব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

এস আই (নিরস্ত্র) মো: আমিনুজ্জামান এর নেতৃত্বে ঢাকার তুরাগ থানাধীন নিশাদ নগরের জনৈক শহিদুল্লাহ’র বাসা থেকে কথিত ভিকটিমকে ৯ জুলাই উদ্ধার করে গতকাল বুধবার বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন। জানা যায়, উক্ত বাসায় ৬ মাস আগে থেকেই বাদীর স্ত্রী ও ছেলে ভাড়া থাকতেন। কথিত ভিকটিম তাহার খালা আঙ্গুরা বেগমের নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত মোবাইল নাম্বার থেকে তাহার বাবা ও মায়ের ব্যবহৃত পৃথক নাম্বারে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন। ভাড়াকৃত বাসার মালিক মো: শহিদুল্লাহ এবং তার স্ত্রী মোছা: আলেয়া আক্তার মনি জবানবন্দীতে বলেন, বাবা আব্দুল খালেক ও মা রোকেয়া আক্তার নিজেরাই লিয়া আক্তারকে তার বাসায় রেখে এসেছিলেন।

কথিত ভিকটিম লিয়া আক্তার উদ্ধার হওয়ার পর বিদ্যা মিয়া বাদী হয়ে গত ৯ জুলাই নেত্রকোণা বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে শশুর আব্দুল খালেক (৬০), শাশুড়ী রোকেয়া আক্তার (৫৭) ও খালা শাশুড়ী আঙ্গুরা (৫০) কে আসামী করে ২০০০ সনের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধিত ২০০৩) এর ৭/৩০/১৭ ধারায় মামলা দায়ের করেন। অভিযোগটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০২০) এর১৮ ধারা মোতাবেক আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে এফ আই আর হিসাবে গণ্য করে নেত্রকোণা পিবিআইকে মামলার তদন্তভার অর্পনের জন্য বিজ্ঞ আদালত কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশনা প্রদান করেন।