হালুয়াঘাট প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার বিলডোরা ইউনিয়নের চায়না মোড় থেকে আতুয়াজঙ্গল বাজার যাওয়ার রাস্তাটি কোথাও হাতের টানে উঠে যাচ্ছে, কোথাও আবার পায়ের আঙ্গুলের ঘষায় আবার কোথায় মুরগীর পায়ের আচর খেয়ে উঠে যাচ্ছে, আবার কোথাও পায়ের চাপে দেবে যাচ্ছে সড়কের পিচ। পুরো সড়কে ২৫ মিলিমিটার পুরো পিচ ঢালাই দেওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ স্থানে নিন্ম মানের বিটুমিন দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিলিমিটার ঢালাই করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
চলতি বছরের জুন মাসের দিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে পল্লী সড়ক ও ব্রিজ-কালভার্ট মেরামতকরণ জিওবি মেইনটেন্যান্স প্রকল্পের আওতায় মাটির সড়কটির কাজ পাকা করণ করা হয়।
এলজিইডির হালুয়াঘাট কার্যালয় থেকে জানা গেছে, উপজেলার গ্রামীণ এই সড়কটি এলাকাবাসীর কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ‘এম আর আর আই ডি পি’ প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত রাস্তাটি দরপত্রের মাধ্যমে প্রায় দেড় বছর আগে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স রুনা এন্টারপ্রাইজ কাজটি শুরু করেছিল। এতে ১২০০ মিটার সড়কে ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় বরাদ্দ ধরা হয়েছে। শুধু রাস্তা নয়, রাস্তার পাশে থাকা ইটের পেলাসাইডিংয়েও রয়েছে সমস্যা। বিভিন্ন স্থানে বাধ না থাকায় ইট উঠে নিচে পড়ে আছে।
নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সড়ক নির্মাণ করায় কাজ শেষ হওয়ার ১ মাসের মাথায় সড়কের বেশীরভাগ অংশের পিচ ঢালাই (কার্পেটিং) উঠে যাচ্ছে। পাথর, বিটুমিনসহ চলমান সংস্কারকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ইতোমধ্যে যান চলাচল শুরু হওয়ায় এই কার্পেটিং অনেক জায়গায় উঠে গেছে। শুধু তায় নয় উঠে যাওয়া কার্পেটিং এর নিচে থাকা ইটের শুরকি গুলো অত্যন্ত নিন্মমানের বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদার গাছের পাতা ও রাস্তায় থাকা ময়লা ও বৃষ্টির মধ্যেই চালিয়েছেন কার্পেটিংয়ের কাজ। এক রকম কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই দ্রুত কাজ শেষ করে ফেলার চেষ্টা। সড়কের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, নিম্নমানের বিটুমিন, বালি, পাথরের মিশ্রণে কাজ করায় যানবাহন চলাচলের সময় চাকার সঙ্গে লেগে অনেক জায়গার কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। ছয় বছরের শিশুও হাত দিয়ে তুলে ফেলছে এক মাস আগে নির্মিত রাস্তার কার্পেটিং।
স্থানীয় বাসিন্দা বৃদ্ধ কুবেদ আলী শেখ বলেন, ছোট বেলায় তালের চেপটা পিঠা খাইতাম। রাস্তাটি দেখইখ্যা সেই দিনের কথা মনে পড়তাছে। সেই পিঠা যেমন সিদ্ধ করার পর চুলা থেইক্যা উঠানো হইতো, এই রাস্তাডাও (রাস্তাটিও) একই অবস্থা। সেই পিডার মতো উইট্টা যাইতাছেগা। রাস্তার কাজের সময় বাধা দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কইছি কন্টাকটাররে। হে কয় সরকারি কাম ইমুতি (এমনি) হইবো। এইনে মাতবরি করবার আইয়ুন (আইসেন) না যে। আমরা কারে কইয়াম। অফিসের লোকও তো এহানো ছিলো। হে তো কিছুই কইলো না। অহন কি অইছে দেখছুন, রাস্তার পিচ উইট্টা যাইতাছেগা।
স্থানীয় বাসিন্দা ফিরুজা খাতুন বলেন, বয়স অনেক হইছে, ইমুত (এমন) রাস্তা বাপের জন্মেও দেখছিনা। মুরগী আচলাইলে রাস্তার পিচ উইট্টা পড়ে, ছুড ছুডুু বাচ্চা রাস্তার পিচ তুইল্লালা। আমরার মাটির রাস্তাই ভালা আছিন। কয়েকদিন পর যখন রাস্তা ভাঙ্গা সব পিচ উইট্টা পড়বো তখন আমরা যারা বুড়া মানুষ তারা খায়াম উসটা। সরকার তো ভালাই দিছিন। চুরেরা কাম না কইরা সব লুইট্টা খাইছে। এদের আগে বিচার করা দরকার।
রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী আব্দুল হেকিম বলেন, রাস্তার কাম শেষ করছে ঈদের দুইদিন আগে। বৃষ্টি ছিল বেশী। ইটের শুরকিগুলো খুবই খারাপ ছিল। এলাকাবাসী বাঁধা দিয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার মাতাব্বর কয়েক জনরে ম্যানেজ কইরা ঠিকই কাম চালাইছে। চেয়ারম্যান মেম্বারকে বলার পরেও রাস্তার কাজ দেখতে আসে নাই। উপজেলা অফিসের এক ইঞ্জিনিয়ার ছিল। সে কি লেখাপড়া কইরা ইঞ্জিনিয়ার হইছে কিনা কে জানে। সেও কিছু কয়না। কন্টারটারের সাথে বইসা আড্ডা পাড়ে। আমরার দাবি সরজমিনে এসে তদন্ত কইরা আপনারা ব্যবস্থা নিবেন।
নিম্নমানের কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার মুর্শেদ ফকির মঠোফোনে বলেন, কাজ খারাপ হয়নি। বৃষ্টির মধ্যে করা হয়েছে তো। তাই একটু সমস্যা হয়েছে। সারা বাংলাদেশেই রাস্তাঘাটের সমস্যা হয়েছে। এখনো ফাইনাল বিল করা হয়নি। যেসব জায়গায় সমস্যা সেটা ঠিক করে দিবো। হালুয়াঘাট গেলে দেখা হইবো ইনশাল্লাহ।
এ বিষয়ে রাস্তাটির দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইসমাইল হোসেন বলেন, রাস্তা যখন করা হয় তখন বৃষ্টি ছিলো তাই একটু সমস্যা হয়েছে। ২-৩ মাস গেলে যখন বেশী গাড়ি চলবে তখন রাস্তার পিচ বসে যাবে। আর রাস্তাটির তো এখনো বিল দেওয়া হয়নি। বৃষ্টির মধ্যে কিভাবে পিচের কার্পেটিং করা হলো জানতে চাইলে তিনি এর কোন সদোত্তর দেননি।
উপজেলা প্রকৌশলী আবু সালেহ মো. ওয়াহেদুল হক বলেন, রাস্তাটির বিল এখনো দেওয়া হয়নি। আমরা সরজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তবে রাস্তায় পিচ হাত দিয়ে তুলে ফেলায় তিনি স্থানীয়দের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।