নির্মলেন্দু সরকার বাবুল : একসময় তাঁতের ঠকঠক শব্দে মুখরিত ছিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের বহুমুখী নারী সমবায় সমিতির তাঁত শিল্প ঘরটি। তবে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে যেন আজ হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প। একমাত্র সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমেই কেবল বাঁচানো যাবে এই ঐতিহ্য। এতে তাঁতশিল্পীরা নতুন উদ্যোমে কাজ শুরুর পাশাপাশি সংসারের সচ্ছলতায় ভূমিকা রাখবে।

নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর উপজেলায় ১০ হাজারের বেশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ বাস করছে। তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা, সামাজিক প্রথা,পোশাক ও সংস্কৃতি। তাদের বিভিন্ন পোশাক তৈরি হতো এখনকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীদের হাতের তাঁত শিল্পের মাধ্যমে।

এই আঞ্চলে ১৯৭৬ সালে বিরিশিরি বহুমুখী নারী সমবায় সমিতির পরিচালনার মধ্যে দিয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের এই ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন নারীরা। একটা সময় যখন ভেঙে পড়ে তখন এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে ২০১৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে সহায়তা দিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন। তখন আবারও শুরু হয় তাঁতশিল্পের কাজ। কিন্ত মেশিনগুলো পুরাতন হওয়ায় এবং মহামারী করোনার কারণে তা আর আলোর মুখ দেখতে পারেনি বেশি দিন। এখানে ২২টি তাঁত মেশিন রয়েছে তার দুইটি কোনোভাবে চালানো যায় বাকি সবই অকেজো। আর্থিক সংকটে বর্তমানে প্রায় চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে তাতঁ শিল্পের কাজ।

এদিকে এ পেশায় নিয়োজিত কেউ কেউ অন্য কাজে চলে গেলেও অনেকেই মায়ায় আটকে আছেন। তাদের মধ্যে ৭৬ বছর বয়সী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী দিয়ালী সাংমা। জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে এই তাতঁ ঘরে। নিজ হাতে তৈরি করেছেন ঐতিহ্যগত পোশাক দকমান্দাসহ নানা রকমের পোশাক। এই তাতঁ শিল্প থেকে উপার্জনের টাকায় সংসারে সহযোগিতায় লেগেছে। শুধু তাই নই এই শিল্পের মায়ায় জড়িয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে। তবে বর্তমানের শিল্পটি বন্ধের পথে তবুও তার স্বপ্ন বেঁধে রেখেছেন আবারও জেগে উঠবে এই তাতঁ শিল্প।

শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের তাতঁ শিল্পের ঘরটি পরিত্যক্তর মতো রয়েছে। তাঁতের মেশিন গুলো এখন নিথরভাবে পড়ে আছে। সেখানকার ২২টি তাঁত মেশিনের মধ্যে দুইটি চালু রয়েছে বাকি ২০ টি পুরোপুরি অকেজো। তাঁত শিল্পের শেষ চিহ্ন বলতে তাদের তৈরি কিছু পোশাক ও অকেজো সব মেশিন। তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়,এক সময় ঐতিহ্যবাহী পোশাক 'দকমান্দা' তৈরিতে নিরলসভাবে কাজ করে যেতেন। তাছাড়াও ওড়না ও গামছা তৈরি করতেন। ওইসব পোশাক স্থানীয় চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেলে আসা লোকজন কিনে নিতেন প্রতিনিয়ত। এখনও প্রচুর চাহিদা রয়েছে তবে এখন আর কাজ করতে পারছেন না। এতে ঐতিহ্য হারিয়ে আধুনিকতার ছায়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে তাঁত শিল্প।

বিরিশিরি বহুমুখী মহিলা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদিকা অমিতা সাংমা বলেন,এক সময় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মহিলারা এই তাঁত শিল্প থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছিলো। কন্তি ধীরে ধীরে এ শিল্পটি আধুনিকতা এবং অর্থের অভাবের কারনে যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখনো এ শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। এ শিল্পকে ঘিরে এখনো স্বপ্ন দেখেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মহিলারা। এখানে প্রায় ২২টি মেশিন রয়েছে তা মেরামত করতে পারলে,তৈরী করা যেতো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সেইসব পোশাক। এতে যেমন রক্ষা করা যেত তাঁতের ঐতিহ্য তেমনি এখনকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীদের সংসারে সচ্ছলতা বৃদ্ধি পেতো।

দুর্গাপুর উপজেলা নিবার্হী অফিসার এম. রকিবুল হাসান বলেন, বিরিশিরি বহুমুখী মহিলা সমবায় সমিতির তাঁত শিল্প ধরে রাখতে ইতিপূর্বেও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা ছিল। এই শিল্পটি অর্থনৈতিক অবকাঠামো না শুধু এই আঞ্চলের ঐতিহ্য। এখন এটি যে অবস্থায় রয়েছে কিছুদিন আগে সরেজমিন পরিদর্শন করেছি আবারও যাবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।