মাজহারুল ইসলাম মিশু : ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনটির সেবা তৃতীয় শ্রেণির হওয়ায় কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলা ১২ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ মানুষ। বড় অগ্নি ইঞ্জিন গাড়ি ছাড়া নেই অন্য কোন বাহন। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ফায়ার সার্ভিসের সেবার মান নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে।

জানা যায়, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০১২ সালের ২১ এপ্রিল মাসে। ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে এ প্রতিষ্ঠানটি। উদ্বোধনের প্রায় ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো তৃতীয় শ্রেণীতেই পড়ে আছে প্রতিষ্ঠানটি। ১৪ জন লোকবল ও বড় ১ টি অগ্নি ইঞ্জিন গাড়ি নিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি।

উপজেলায় এখনো ৮০০ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক রয়েছে। পাশাপাশি পৌর শহরের অনেক গলিতে বড় গাড়ি যেতে পারে না। গ্রামের কোথাও আগুন লাগলে কাঁচা সরু রাস্তা দিয়ে এই অগ্নি ইঞ্জিন গাড়ি যেতে পারে না। ফলে অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধার, আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান, মুমূর্ষু রোগীদের হাসপাতালে প্রেরণ ও উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনাসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক ও মানবিক দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায় বহুগুণ।

তৃতীয় শ্রেণির স্টেশনগুলোতে একটি মাত্র পানিবাহী বা অগ্নি ইঞ্জিন গাড়ি থাকে। কোনো দুর্ঘটনায় উদ্ধারে গেলেও আহতদের এই পানিবাহী গাড়ি দিয়ে হাসপাতালে পাঠানো যায় না। ময়মনসিংহ জেলায় সব উপজেলাতেই দ্বিতীয় শ্রেণীর স্টেশন রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ উপজেলায় ২ টি স্থলবন্দর ও পৌরসভা থাকার পড়েও এখনো কেন তৃতীয় শ্রেণির ফায়ার সার্ভিস স্টেশন এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ।

মকিমপুর নগুয়া গ্রামের মামুনুর রশিদ বলেন, বেশ কিছুদিন আগে আমার চাচার খড়ের পালায় আগুন লাগে। সে সময় ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে তারা অনেকটা দূরে এসে রাস্তা কাঁচা হওয়ায় আসতে পারেনি। পড়ে ভ্যান দিয়ে গাড়িতে থাকা পাম্প মেশিন নিয়ে আসতে হয়। ততক্ষণে বিশালাকার খড়ের পালা পুড়ে শেষ হয়ে যায়। যদি ছোট গাড়ি থাকতো তাহলে ক্ষতি অনেক কম হতো।

কুতিকুড়া গ্রামের সাইদুর রহমানের অভিযোগ, খড়ের পালায় কয়েকদিন আগে আগুন লাগে। সেখানে সরু রাস্তা থাকায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নেভাতে আসতেই পারেনি। ফলে খড়ের পালা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এমন অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। যেখানে শুধু ছোট গাড়ি না থাকার কারণে ফায়ার সার্ভিস যেতে ব্যর্থ হয়েছে।

হালুয়াঘাট দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি কবি জালাল উদ্দিন আহমদ বলেন, আমাদের জনপ্রতিনিধি যারা ছিলেন তারা জনগনের চেয়ে নিজের চিন্তা বেশী করেছেন। হালুয়াঘাটে অধিকাংশ সড়ক এখনো কাঁচা। বর্ষাকালে তো অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এখনো তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে আছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন এটি দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়।

ময়মনসিংহ জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল স্টেশনের সহকারী পরিচালক মো. মাসুদ সরকার বলেন, ফায়ার সার্ভিস দ্বিতীয় বা প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। হয়তো হালুয়াঘাটে এ বিষয়ে কেউ কোন কথা বলেননি। জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়। আমরা তখন রিপোর্ট দিলেই কেবল তা দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করণ করা হয়। যেহেতু বর্তমানে জনপ্রতিনিধি নেই, তাই এটি সময় সাপেক্ষ বিষয়।