আফজাল হোসেন বারহাট্টা সংবাদদাতা : স্ মিলে কাঠ কাঁটার পর করাত মিলের নিচে জমা হওয়া উচ্ছিষ্ট গুঁড়াগুলো ভূষি হিসেবে পরিচিত। এগুলো একসময় নদী-নালায় ফেলে দেওয়া হতো। এখন এগুলো জ্বালানি কাজের বাহিরেও বিভিন্ন কল কারখানায় চড়া দামে বিক্রি করা হয়। ভূষি সংগ্রহ করে ৭ বছর যাবৎ সংসার চালাচ্ছে নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের কাচু মিয়ার ছেলে লিটন মিয়া। সে তার পরিবার নিয়ে অন্যের জায়গায় বসবাস করে। এর পরও সদা হাস্যোজ্জ্বল থাকে জরাজীর্ণ লিটন মিয়া।
দুই ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে লিটন মিয়ার সংসার। ৬ জনের সংসারে একটি মাত্র ভ্যানগাড়ি। এই গাড়িটি নিয়ে সকাল সকাল বেড়িয়ে পরে। সাথে বড় ছেলেটিকে নিয়ে বিভিন্ন মিলে চলে যায় লিটন মিয়া। সারাদিনের জমানো ভূষি গুলো সকাল সকাল তুলে করাত মিলের গর্তটি পরিস্কার করে দিতে হয়। তাই ফজরের আযানের পর পরই তার চুক্তিকৃত মিলে লোক পাঠিয়ে দেয়। তার সাথে আরও তিনজন লোক চুক্তিভিত্তিক ভূষি তোলার কাজ করে।
জানা যায় কাঠের গুঁড়া থেকে শক্ত কাঠ, মশার কয়েল, বিভিন্ন ধরনের বোর্ড বানানো সহ নানা ধরনের জিনিস তৈরি করা হয়। এই ভূষি কাজে লাগানোর কারনে নতুন আর একটি গাছ না কেটেই কাঠের চাহিদা পুরণ করা যায়। আবার এই বোর্ড এতটাই মজবুত যে সহজে ঘূনে ধরবে না। পানিতে পঁচবে না। ঋতু পরিবর্তনের সময় কাঠ আঁকাবাঁকাও হবে না।
মিলে কাঠ কাটার পর মিল মালিকের কাছ থেকে ১৫০ টাকায় প্রতি বস্তা ভূষি সংগ্রহ করে লিটন মিয়া। এর পর এলাকার চাহিদা পূরণ করে বাকীগুলো নেত্রকোনা চল্লিশা এলাকায় বিসিক শিল্প নগরীতে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে এই ভূষি বা গুঁড়াগুলো মেশিনে দিয়ে পাউডারে পরিণত করা হয়।
সেখান থেকে এই পাউডার দেশের বিভিন্ন কারখানায় পাঠিয়ে দেয় সেখানকার ব্যবসায়ীরা। পরবর্তীতে এই পাউডারের সঙ্গে কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি করা হয় পরিবেশবান্ধব কাঠ, কশার কয়েল সহ নানান জিনিস। কেউ কেউ আবার কারখানা থেকে তৈরি করছে দরজা, বোর্ড, টিম্বার টিউব সহ নানা ধরনের ফার্নিচার।
লিটন মিয়া বলেন আমি ৭ বছর ধরে ভূষির গুঁড়া বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। আমার সাথে গুমুরিয়া গ্রামের আসলাম, আসমা গ্রামের খায়রুল সহ একজন মহিলাও কাজ করে। ৭ বছর আগে এক বস্তা ভূষি ৫০ টাকায় কিনে ১০০ টাকায় বিক্রি করতাম। এখন অনেক দাম। এক বস্তা মাল এখন ১৫০ টাকায় কিনতে হয়। জ্বালানি কাজে ও পোল্ট্রি মুরগী খামারে বিক্রি করলে একটু বেশি দাম পাই। আর কারখানায় একটু কম দামে বিক্রি করতে হয়। আগের মত এখন আর শরীরে শক্তি পাইনা। পোলাপান গুলো নিয়ে অন্যের জায়গায় থাকি। এর পরও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি।