গত ১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ময়মনসিংহ লাইভ নামের অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত ‘আনন্দ মোহন কলেজে ছাত্রলীগকে শক্তিশালী করছেন অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ’ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের ক্ষমতায়ণ চান আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যক্ষ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সংবাদটি উদ্দেশ্য প্রনোদীত, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে। যা কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। আমি মো. আমান উল্লাহ অধ্যক্ষ হিসাবে শুরুতেই এ সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।

প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, আওয়ামীপন্থি শিক্ষক ও ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের নিয়ে গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর এখন পর্যন্ত ৬ টি গোপন মিটিং করছেন অধ্যক্ষ। যে তথ্য একেবারেই অসত্য ও ভিত্তিহীন।

সংবাদে আরও বলা হয়েছে, ‘অনুসন্ধানে জানা যায়, ময়মনসিংহ নগরীতে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা যখন রাজপথে আন্দোলন করছিল ঠিক তখনও ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কার্যক্রমকে সক্রিয় রাখতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে নিয়মিত ভুনা খিচুরির আয়োজন করতেন অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ। এমনকি গত ১৭ জুলাই আনন্দমোহন কলেজ এলাকায় অধ্যক্ষ আমান উল্লাহর নির্দেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে দেশী-বিদেশী অস্ত্র নিয়ে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়, যার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। অধ্যক্ষের সরাসরি ইন্ধনে কলেজটির কাজী নজরুল ইসলাম হল, ভাষা সৈনিক আবু সালেহ হল এবং ফজলুল হক হলে এখনও দেশী-বিদেশী অস্ত্র মজুত রেখেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ফলে যেকোন সময় কলেজের হলগুলোতে মজুত থাকা লাঠিসোটা ও অস্ত্র নিয়ে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়তে পারে ছাত্রলীগ, নষ্ট হতে পারে কলেজের সামগ্রিক পরিবেশ।

এসব তথ্য একেবারেই মনগড়া ও বানোয়াট। বিশেষ স্বার্থান্বেষী মহলের উদ্দেশ্যে হাসিলের জন্য এ বানোয়াট গল্প সাজানো হয়েছে বলে মনে করি। এছাড়া কিসের অনুসন্ধানে প্রতিবেদন এসব তথ্য পেলেন তাও বোধগম্য নয়। প্রতিবেদনে ফজলুল হক হলের কথা বলা হলেও বাস্তবে আনন্দ মোহন কলেজে এ নামে কোন হল নেই।

ছাত্র জনতার আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে ময়মনসিংহের একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে মোবাইল ফোনে আমার কথোপোকথনের কথা বলা হয়েছে। আমি ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যক্ষ হওয়ায় অনেকেই আমাকে ফোন করেন। তবে কারও সঙ্গে কলেজের স্বার্থবিরোধী কোন কথা কখনো হয়নি।

সংবাদে প্রকাশ হয়েছে, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খান সাদী হাসান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পাপিয়া সুলতানা রোজী এবং দর্শন বিভাগের প্রভাষক মো. আশরাফ উজ জামান ছাত্রলীগ নেতাদের কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সময় আর্থিক অনুদান দিয়ে সহযোগীতা করে আসছেন। গত জুন মাস থেকে আগস্টের ৩১ তারিখ পর্যন্ত এসব শিক্ষকের সাথে ছাত্রলীগ নেতা শেখ সজল, ওমর ইসলাম, নাজমুল ইসলাম, রাজন সিদ্দিকী ও জাহিদ হাসান (জিম) এক হাজারেরও বেশিবার ফোনে যোগাযোগ করেছেন। সংশিষ্ট শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে ছাত্রলীগের কোন কর্মীকে কোন প্রকার অনুদান দেওয়া হয়নি।

‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ গত ২৩ জুলাই দুপুর ২ টা ১৩ মিনিটে ছাত্রলীগ নেতা শেখ সজলের সাথে প্রায় ৫ মিনিট কথা বলেন। ১৮ জুলাই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা যখন ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হলে অবস্থান নেয় সেদিন দুপুর ৩ টা ৪৯ মিনিটে শেখ সজলকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে টাউন হলে অবস্থান নিতে নির্দেশ দেন অধ্যক্ষ আমন উল্লাহ। এরকম করে প্রায় সময়ই শেখ সজলকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলতেন তিনি।’ সংবাদে প্রকাশিত এমন মনগড়া কথা হাস্যকর মনে হয়েছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

‘গত ৪ জুলাই দুপুর ৪টা ১৪ মিনিটে ছাত্রলীগ নেতা ওমর ইসলামকে গোলকীবাড়ী রোডের একটি বাসায় মোবাইলে ডেকে পাঠান অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ। পরবর্তী সময় ওমর ইসলাম আমান উল্লাহর বার্তা নিয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাত করেন এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর কিভাবে হামলা চালানো যায় তার পরামর্শ নেন।’প্রকাশিত সংবাদে একজন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা প্রচার খুবই নিন্দনীয় ও হতাশাজনক মনে করি।

সংবাদের একাংশে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা যেন কলেজ অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য না করে সেজন্য ছাত্রলীগকে ঐক্যবদ্ধ করতে শিক্ষক পরিষদের নেতারা অধ্যক্ষ আমান উল্লাহকে নিয়ে গত ১৩ আগস্ট কলেজ ক্যাম্পাসেই মিটিং করেন। এই মিটিংয়ে ছাত্রলীগের ২৫জন নেতাকর্মীও উপস্থিত ছিলেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর কলেজ ক্যাম্পাসে আবারও ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন আমান উল্লাহ ‘

প্রতিবেদকের উদ্দেশ্যে যথাযথ সম্মান রেখে বলতে চাই, আনন্দ মোহন কলেজের শতভাগ শিক্ষার্থী আমার প্রাণপ্রিয় ও সন্তানসম। তাঁরা আমাকে শিক্ষক হিসাবে যথেষ্ট ভালবাসেন এবং সম্মান করেন বলে আমি গর্বিত শিক্ষক।

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনিকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ঘুষ দিয়ে ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী আনন্দ মোহন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পদ বাগিয়ে নেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. আমান উল্লাহ। তৎকালীন এই ঘুষ লেনদেনের মধ্যস্থতা করেছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। শুধু তাই নয়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ ময়মনসিংহ শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে পদোন্নতির জন্য গত ২৬ মে ময়মনসিংহ জেলা আওয়মী লীগের সহসভাপতি ফারুক আহমেদ খানের মাধ্যমে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর কাছে সানকিপাড়ার একটি বাসা থেকে ৩০ লক্ষ টাকা পাঠান। এসব কাল্পনিক তথ্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

প্রকাশিত সংবাদে আরও বলা হয়েছে, অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ করোনাকালীন সময়ে এক হাজার এইচএসসি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ফরম ফিলাপের নাম করে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা আত্নসাৎ করেছেন। এ অসত্য তথ্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলতে চাই, ২০২১ সালের ১৯ জুন করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়া হয়। ওই সময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন মো. নুরুল আফছার।

পরিতাপের বিষয় প্রকাশিত সংবাদে আমার বিরুদ্ধে বলা হয়েছে টাকা লুটপাট করে ছাত্রলীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামে ডোনেশন দিতেন।' এ মিথ্যা অপপ্রচারের ও নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাই।

আমার বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারীর কথাও উল্লেখ করা হয়েছে সংবাদটিতে। আমি এ মিথ্যা তথ্যের প্রতিবাদ জানাই।

পরিশেষে বলতে চাই, এ সংবাদটি উদ্দেশ্য প্রনোদীত এবং মিথ্যা। প্রতিবেদক আমার সঙ্গে কোন কথা না বলেই দীর্ঘ এ সংবাদটি করেছেন। উল্লেখ করা হয়েছে মোবাইল ফোনে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে আমি ফোন ধরিনি। আমি বলতে চাই একজন দায়িত্বশীল প্রতিবেদক চাইলে কলেজে গিয়ে আমার বক্তব্য জানতে চাইতেন।