আফজাল হোসেন, বারহাট্টা সংবাদদাতা : নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলায় সাহতা ধনাই নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি এখন এলাকাবাসীর জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক আন্দোলনের পর এই সেতুটি বরাদ্দ হওয়ায় বারহাট্টা বাসী আনন্দিত হলেও এখন আছে চরম বেকায়দায়।
অনেক অনিয়মের পর সেতুটির কাজ শেষ করার পর ২০১৪ সালে নেত্রকোনা-২ আসনের এমপি আশরাফ আলী খান খসরু'র আমলে সেতুটি উদ্বোধন করা হয়। ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় নির্মিত সেতুটি এনটিটিএমএআর (জেবি) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১১ সালে কাজ শুরু করে ২০১৪ সালে কাজ শেষ করে।
উদ্বোধনের পর থেকে জলপথের যানবাহনের মালিকদের কপালে দুর্গতি শুরু হয়। একপর্যায়ে বালুবাহী নৌকার ধাক্কায় সেতুর গার্ডার ও পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নৌকার ধাক্কায় একটি পিলারের রড বেড়িয়ে ঝুঁকির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুর রহিম শেখ ২০২৩ সালে সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে এবং তিন টনের বেশি ভারী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখে।
২০২৩ সাল থেকে জলে ও স্থলে দুই পথেই দুর্গতি শুরু হয়। এরপর ব্রীজটির উপরে ইটের গাঁথুনি দিয়ে যানচলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়।
পরে এলাকাবাসী সিএনজি ও অটোরিকশা চলাচলের জন্য একটু রাস্তা করে দেয়। আর জল পথে বালুবাহী নৌকা, যাত্রীবাহী ট্রলার ভয়ে ব্রীজের নিচ দিয়ে পারাপার হয় না। কারন বিগত দিনে ১০ হাজার ঘনফুটের ২ টি নৌকা এই ব্রীজের নিচে ডুবেছে। এছাড়া ছোট নৌকা ডুবিসহ অনেকেই এই ব্রীজের নিচে আহত হয়েছে। এখন জল আর স্থল দুই রাস্তায় ভোগান্তির শেষ নেই।
সাহতা গ্রামের সবুজ মিয়া জানায়, সেতুটির কাজের শুরুতেই অনেক অনিয়ম আমাদের চোখে ধরা পড়ে। আমরা এই কাজে বাঁধা দেয়ায় এলাকার ৩২ জনের নামে একটি মামলা হয়। এই মামলায় আমিও আসামী ছিলাম। একপর্যায়ে এমপি আশরাফ আলী খান খসরু এসে আমাদের এলাকার মসজিদে বসে মামলাটি নিষ্পত্তি করে আমাদের মসজিদে একটি টিউবওয়েল দিয়ে যায়। ক্ষমতার কাছে আমাদের চেষ্টা কোন কাজে আসে নি।
সাহতা গোপালপুর গ্রামের আশিকুল ইসলাম বলেন, কত সাংবাদিক এসে ছবি তুলে ও নিউজ করে, কিন্তু কোন লাভ হয় না। এটা কোন ব্রীজ হল। দুইটা বড় বড় নৌকা এই ব্রীজের নিচে ডুবেছে। অনেকেই আহত হয়েছে। কয়েকটা পিলার ভেঙে গেছে। আট দশ বছরে নৌকার ধাক্কায় ব্রীজ ভেঙে গেলে বুঝেন কেমন কাজ করেছে। এখন উপরেও বন্ধ নিচেও বন্ধ। বড়গাড়ি এদিকে আসে না। বর্ষাকালে নৌকা দিয়েও চলাচল করা যায় না। আমরা বড় কষ্টে আছি। আশির্বাদের ব্রীজ এখন আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, সাহতা ব্রিজকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ব্রিজ মেইনটেন্যান্স প্রজেক্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই সেতু নির্মাণ করা হবে।