দুর্গাপুর প্রতিনিধি : গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সাত ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচ ইউনিয়নের ৪০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সেইসব গ্রামের ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে এবং বন্ধ রয়েছে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম। তবে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে আছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সোমেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বর্তমানে নদীটির পানি বিপৎসীমার এক দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে,উপজেলার ১৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমির কুল্লাগড়া,কাকৈরগড়া,চণ্ডিগড় ও গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

অপরদিকে উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, সরকারি প্রাথমিকের ৬৪টি বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ৮টির বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। সেগুলোর উল্লেখযোগ্য হলো,দক্ষিণ জাগিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাওদ্বারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাগিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শংকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,ভাদুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুন্সিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাদুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,সাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চুখাইকালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আটলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাঙ্গালিয়াকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুর্ব জাঙ্গালিয়াকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাঁওকান্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নন্দেরছটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,পুর্ব নন্দেরছটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হরচাপটাবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুবরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিকাবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাকড়ককান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আড়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাইজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাঁঠালকালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নলজোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমড়াতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বন্দকাটুয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শুকনাকুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝানজাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বায়রাউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোদারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাংসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নগুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গন্ডাবের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,দক্ষিণ গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,কৈলাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,কুলুঞ্জা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,বকেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়বাট্টা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,ডেউটুকোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,বিলাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুর্ব বিলাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,কৃষ্ণেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাকলজোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,উত্তর কেট্টা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,কেট্টা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,গুজিরকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নগরশিংহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ চারিগাওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,দক্ষিণ ছোটকাটুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো হলো, গুজিরকোনা উচ্চ বিদ্যালয়, জাগিরপাড়া সবদরআলী উচ্চ বিদ্যালয়, ভাদুয়া নিম্ন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়,নয়াগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়,কোনাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, কাকৈরগড়া ই্উনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় , ঝানজাইল বিএম স্কুল এন্ড কলেজ।

গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের ভাদুয়া গ্রামের কৃষক জসিম মিয়া বলেন, আমাদের জমির ফসল সব পানির নিচে। আমাদের এগুলাই ভরসা ছিলো। এমন অবস্খায় আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। বাকলজোড়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান ইউসুফ তালুকদার সাগর বলেন,আমার ইউনিয়নের ৮০ ভাগ পরিমাণ ধান জমির নষ্ট হতে বসেছে। পানি বন্দি হয়ে হয়ে অনেক মানুষ। আমরা সবসময়ই খোঁজ খবর রাখছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বজলুর রহমান আনসারী বলেন,আমরা খোঁজ খবর নিয়েছি তাতে আমাদের উপজেলার ৮টি বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। কিছু কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা গেলেও শিক্ষার্থীরা কেউ আসতে পারছেনা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. ফজলুর রহমান বলেন,আমাদের ১২৬টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬৪টি বিদ্যালয়ে পাঠদান একদমই বন্ধ সেগুলো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এছাড়াও আরো ১৫-২০ বিদ্যালয়ের মাঠে পানি। এখনো বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে খবর পাচ্ছি।

দুর্গাপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি অফিসার নিপা বিশ্বাস জানান,এ মৌসুমে উপজেলায় ১৬ হাজার ৪০০ হেক্টর রোপা আমন ধান চাষাবাদ হয়েছিল তার মধ্যে বর্তমানে ১০ হাজার হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন,পানি যদি কমে যায় তাহলে আশা করি কৃষকরা রক্ষা পাবেন। কিন্তু যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে যদি ৪ থেকে ৫দিন এভাবেই পানিতে তলিয়ে থাকে তাহলে সবফসল নষ্ট হয়ে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমরা কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং তাদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।