আরিফ আহম্মেদ : বয়সের ভারে এখন ক্লান্ত তোতা মিয়া (৬৫)। দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত বিভিন্ন বাজারে বাজারে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করেন তিনি। কিন্তু এখন আর তিনি আগের মতো হাঁটতে পারেন না, শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়।

একমাত্র ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী, সেও সংসারের কোন কাজ করতে পারে না। ছয় সদস্যের পরিবারের মুখে দু'বেলা খাবার তুলে দিতে এই বয়সে চায়ের কেটলি হাতে নিয়ে প্রতিদিন বের হন তোতা মিয়া। কখনো অসুস্থ হয়ে গেলে, না খেয়ে থাকতে হয় তাদের। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের নওয়াগাঁও গ্রামে।

তোতা মিয়া বলেন- একজনের কাছে একদিন তিনি জানতে পারেন, গৌরীপুরের ইউএনওর কাছে গেলে হয়তো কোন সাহায্য বা সহযোগিতা পেতে পারেন । তাই সাহস করে একদিন তিনি চলে যান ইউএনওর অফিসে। অনেক ব্যস্তার মাঝে তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেন ইউএনও ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন। কয়েকদিনের মধ্যেই তার জন্য একটি দোকান ঘর নির্মাণ করে দেন। দোকানের জন্য আজ (বৃহস্পতিবার) মালামাল ও চায়ের কেটলি, চা-পাতা, চিনিসহ মনোহারি পণ্য ক্রয় করে দিয়েছেন। এখন আর বাজারে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করতে হবে না তাঁর। তিনি মনোযোগ দিয়ে ব্যবসা করবেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গৌরীপুর সমাজসেবা কার্যালয়ের সামনে এসব মালামাল তোতা মিয়ার কাছে হস্তান্তর করেন ইউএনও।

গৌরীপুর সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহফুজ ইবনে আইয়ুব জানান, সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে তোতা মিয়াকে ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি দোকান ঘর নির্মাণ, ২০ হাজার টাকার মালামাল ক্রয় ও কিছু নগদ অর্থ দেয়া হয়েছে, যাতে তিনি আত্মনির্ভরশীল হতে পারেন।

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও প্রশাসক মোঃ শাকিল আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন- এই বয়সে তোতা মিয়া অসুস্থ শরীর নিয়ে বিভিন্ন বাজারে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করেন, বিষয়টি অমানবিক। তাঁর ছেলেটিও প্রতিবন্ধী, তাই মনে হলো এমন একটা কিছু করে দেই যাতে ছেলেটির আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হশ। সেই চিন্তা থেকেই চায়ের দোকানের পাশাপাশি মনোহারী ব্যবসার ব্যবস্থা করে দেয়া। তাছাড়া সরকার সবসময় মানুষকে আত্মনির্ভরশীল হতে অনুপ্রাণিত করছে, প্রত্যেককেই স্বাবলম্বী হতে হবে, যাদের আর্থিক সমস্যা আছে সরকার সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে।