হালুয়াঘাট প্রতিনিধি : দীর্ঘ ২৬ বছরের অধিক সময় ধরে অযন্তে অবহেলায় পড়ে আছে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার শাকুয়াই খাদ্য গুদাম। খাদ্য সংরক্ষনের জন্য নির্মিত গুদামটি বর্তমানে কোন কাজেই আসছেনা।

২৪ শে ডিসেম্বর ১৯৮১ সালে তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী আব্দুল মোমেন খান গোদামটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে কেনা হতো ধান। ৫০ থেকে ৬০ জন শ্রমিক প্রতিদিন গুদামটিতে কাজ করতো। গুদামটিতে ধান বিক্রয়ের জন্য আশেপাশের হাজারো কৃষকের ভিড়ে শাকুয়াই মোড়ে বিভিন্ন দোকান বসতো। কিন্তু কোন কারন ছাড়াই প্রায় ২৬ বছর আগে হঠাৎ করেই গুদামটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে বেকার হয়ে পড়ে অনেক শ্রমিক। পাশাপাশি ন্যায্য মূল্যে ধান বিক্রয় থেকে কৃষকরাও হয় বঞ্চিত।

সরজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২ একর জায়গার এক কোনে ৫শত টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন গুদামের প্রধান ভবনটি এখনো মজবুত রয়েছে। চারদিকে নিরাপত্তা বেষ্টনীও থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জুয়ারো, মাদক সেবন ও যৌন কর্মীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। গুদামের তালা ভেঙে অনেক বছর আগে ওজন মাপা যন্ত্র ও বেশ কিছু সরঞ্জাম চুরি হয়ে যায়। স্টাফ কোয়াটার ও নিয়ন্ত্রক কার্যালয়টি ব্যবহৃত হচ্ছে বসতঘর হিসেবে।

গুদামের থাকা মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার পিতা গুদামটির ঝাড়ুদার ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর আমি সেই দায়িত্ব পাই। তবে গুদামটি বন্ধ হওয়ার পর বেতন বা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছি। গুদাম বন্ধ হওয়ার পর থেকেই পরিবার নিয়ে গুদামের স্টাফ রুমে থাকছি। পাশাপাশি গুদামের সামনে একটি চায়ের দোকান দিয়ে তা দিয়েই কোন রকম চলছি। গুদামটি যদি চালু হতো তাহলে অনেকেরই কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হতো।

ভাট্টা এলাকার কৃষক মাসুদুল হাসান বলেন, আমাদের এই এলাকাটি কৃষির উপর নির্ভরশীল। এই এলাকায় গুদামটি কৃষকদের জন্য সুখের বার্তা বয়ে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু গুদামটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা ন্যায্য মূল্যে ধান বিক্রি থেকে বঞ্চিত হয়েছি।

শাকুয়াই এলাকার কৃষক প্রবীণ কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আগে আমরা আমাদের ফসলি জমিতে উৎপাদিত ধান গুদামে বিক্রি করেছি। এতে করে আমাদের পরিবহণ খরচ ছিল খুবই কম। দাম ভালো পাওয়াতে আমরা লাভবান হয়েছি। কিন্তু গুদাম বন্ধ থাকার পর থেকেই আমরা বাজারে ধান বিক্রি করি। এতে করে আমরা সঠিক মূল্য পাচ্ছি না।

পাশাপাশি সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ভালো মানের ধান ক্রয় করতে পারছেনা। আমরা বিভিন্ন সময় গুদাম চালুর বিষয়ে উপজেলায় জানিয়েছি। কিন্তু কোন সরকার এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

শাকুয়াই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস আলী খান বলেন, উপজেলা সদর থেকে এই ইউনিয়নটি ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কৃষকদের কথা চিন্তু করে তৎকালীন বিএনপি সরকার এই এলাকায় একটি খাদ্য গুদাম নির্মাণ করেন। এতে করে শুধু শাকুয়াই নয়, প¦ার্শবর্তী বিলডোরা,স্বদেশী ও নড়াইল ইউনিয়নের কৃষকরাও এই গুদামে ধান বিক্রি করতে নিয়ে আসতো। কিন্তু আকস্মিক গুদামটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে কৃষকরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। উপজেলা মাসিক মিটিংয়েও আমি একাধিকবার গুদামটি চালুর বিষয়ে কথা বলেছি। আমি আশা করবো অচিরেই গুদামটি চালুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. হাসান আলী মিয়া বলেন, আমি এই উপজেলায় দু’বছর ধরে কর্মরত রয়েছি। এর মধ্যে আমি উদ্বর্তন কর্মকর্তাদের সাথে এ বিষয়ে কথাও বলেছি। সামনে বোরো মৌসুমের মধ্যে আমরা গুদামটি চালু করতে পারি কিনা সে বিষয়ে চেষ্টা করছি। এ গুদামটি চালু হলে আমাদেরও সুবিধা হবে। বিশেষ করে সংগ্রহ মৌসুমে ঐ এলাকা থেকে ধান ক্রয় করা আমাদের জন্য সমস্যা হয়ে ধারায়। গুদামটি চালু হলে ঐ অঞ্চলের কৃষকরাও ন্যায্য মূল্যে ধান দিতে পারবে।