মেহেদী হাসান আকন্দ: আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনায় বিচারক-আইনজীবীদের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। আদালতের বিচারিক কার্যক্রমে সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলী ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে তারা চরম বৈষম্যে শিকার।
তাদের এই বৈষম্য দূর করতে বিচার বিভাগীয় এসোশিয়েশনের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে সুনির্দ্দিষ্ট দাবীতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। বিচারক ও সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে অধস্তন আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
বিচারকদের নিয়োগ ও পদোন্নতি দিয়ে থাকেন আইন মন্ত্রণালয় হাইকোর্ট বিভাগের অনুমতিক্রমে, সহায়ক কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে থাকেন আইন মন্ত্রণালয়, বদলী করে থাকেন হাইকোর্ট বিভাগ এবং আদালতের সহায়ক কর্মচারীদের নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রদান করে থাকেন জেলা জজ। সহায়ক কর্মচারীদের আন্ত:জেলা বদলী করে থাকেন হাইকোর্ট বিভাগ।
আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বেতন- ভাতাদি পরিশোধ করা হলেও নিয়ম কানুন অনুসরণ করা হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের। বিচার বিভাগের জন্য পৃথক পে-স্কেল করা হলেও সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উক্ত পে-স্কেলে অন্তভুক্ত করা হয়নি। বিচারকদের জন্য বিচারিক ভাতা থাকলেও বিচার কাজে সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কমপক্ষে ৪/৫ ঘন্টা বাড়তি কাজ করলেও নেই কোন বাড়তি সুযোগ-সুবিধা।
বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর হতে বিচারকদের জন্য যে সকল সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে সকল ক্ষেত্রেই বঞ্চিত করা হয়েছে সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। বৈষম্যে শিকার হওয়া আদালতের সহায়ক কর্মচারীগণ বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারী হিসাতে স্বীকৃতিসহ দুই দফা দাবীতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে।
বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, দেশে প্রায় ২০ হাজার সহায়ক কর্মচারী রয়েছে। আদালতে বিচারিক কার্যক্রমে এই সহায়ক কর্মচারী গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করলেও তাদেরকে এখনো বাংলাদেশ জুডিসিয়াল বেতন স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পদোন্নতির ক্ষেত্রেও অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। অনেকের পদোন্নতির আগেই তাদের চাকুরীর সময় শেষ হয়ে যায়। বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশনের দাবী অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মচারীদের এক ও অভিন্ন নিয়োগ বিধি প্রণয়ন করে বাংলাদেশ বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারী হিসাবে গণ্য করতে হবে এবং জুডিসিয়াল বেতন স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও জ্যৈষ্ঠতার ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পদোন্নতি এবং উচ্চতর গ্রেড দিতে হবে।
এছাড়াও বিচারকগণ স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর পাশাপশি দেওয়ানি আদালতের অবকাশকালীন (ডিসেম্বর মাস) ফৌজদারী আদালতে দায়িত্ব পালনের জন্য এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ভাতা প্রাপ্ত এবং প্রতি মাসেই বিচারিক ভাতা হিসাবে মূল বেতনের ৩০ শতাংশ প্রাপ্ত হন। কিন্তু অবকাশকালীন ছুটিতে সহায়ক কর্মচারীগণ দায়িত্ব পালন করলেও তারা কোন বিচার সহায়ক ভাতা পান না। এমনকি চৌকি আদালতের বিচারকগণ চৌকি ভাতা প্রাপ্ত হলেও চৌকি আদালতে কর্মরত সহায়ক কর্মচারীগণ চৌকি ভাতা থেকে বঞ্চিত। মামলার আধিক্যের কারণে প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে চেয়ে প্রায় ৪/৫ ঘন্টা বেশি সময় কাজ করতে হয়। এই বাড়তি সময়ে জন্য কোন ভাতা প্রদান করা হয় না। মাঠ পর্যায়ে সমন জারির সাথে সম্পৃক্ত জারিকারকদের সমন জারির জন্য টি.এ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও এই খাতে বরাদ্দ না থাকায় তাদেরকে টি.এ/ডি.এ প্রদান করা হয় না। বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীদের পদ-পদবীর নাম পরিবর্তন পূর্বক উচ্চতর বেতন স্কেলে পদায়ন করা হলেও বিচার বিভাগে কর্মরত সহায়ক কর্মচারীগণ রয়েছেন বঞ্চিত।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে বৈষম্য দূরীকরনে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর স্বারকলিপির মাধ্যমে তাদের যৌক্তিক দাবীগুলো অবগত করা হলেও বাস্তবায়নে কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি।
বৈষম্য দূরীকরণে প্রয়োজনে সারাদেশের বিচার বিভাগ কর্মচারী এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কর্মবিরতি ঘোষণা করা হলে আইন ও বিচার বিভাগ অচল হয়ে পড়বে। কঠোর এই কর্মসূচি গ্রহনে সহায়ক কর্মচারীদের বাধ্য না করে সরকার দ্রুত এই বৈষম্য দূরিকরণে উদ্যোগ গ্রহন করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।