গৌরীপুর প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের গৌরীপুর সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ মোঃ হাবিব উল্লাহর (অবসরপ্রাপ্ত) বিরুদ্ধে জমি দখলের পাঁয়তারা, মালামাল লুট, চাঁদাবাজিসহ হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর স্মারক লিপি দিয়েছেন কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

বুধবার দুপুরে গৌরীপুর পৌর শহরের ধান মহাল এলাকায় এ মানববন্ধন কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ হাবিব উল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকারী শামিম হোসেন বগুড়া জেলার বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন যাবত গৌরীপুরে আত্মগোপনে আছেন। তাঁর জাতীয় পরিচয় পত্রে উল্লেখ রয়েছে, তিনি গৌরীপুর পৌর শহরের মধ্য বাজার এলাকার পূর্ব লাইনে ৯৯৯ হোল্ডিং এর বাসিন্দা। কিন্তু গৌরীপুর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী ও নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মদন মোহন দাস লিখিতভাবে জানিয়েছেন- পৌর সভার ভলিয়মে এই অঞ্চলে ৯৯৯ নামে কোন হোল্ডিং লিপিবদ্ধ নেই।

এছাড়াও জানা গেছে- বগুড়ার শামীম হোসেন উপাধ্যক্ষ হাবিব উল্লাহর ছেলে ডা. আমান উল্লাহর পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে কর্মের সন্ধানে ২০১৩ সালে গৌরীপুর আসেন। তখন উপাধ্যক্ষ হাবিব উল্লাহ তাঁকে গৌরীপুর সরকারি কলেজে চুক্তিভিত্তিক একটি চাকরির দিয়ে কলেজের পাশে থাকার ঘরের ব্যবস্থা করে দেন। সেই থেকে শামীম গৌরীপুরে বসবাস করছেন। ধীরে ধীরে সে ডা. আমান উল্লাহর আস্থা অর্জন করতে সমর্থ হয়। এক পর্যায়ে আমান উল্লাহ আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও একটি মুরগির খামার গড়ে দেন। কিন্তু শামীম প্রতিটি ব্যবসাতেই লোকসান দেখায়। পরবর্তীতে উপাধ্যক্ষ হাবিব উল্লাহ সাফিনা সাইলেজ নামে গো খাদ্যের একটি কারখানা চালু করে তা দেখাশোনার দায়িত্ব দেন শামীম হোসেনকে। কিন্তু ধীরে ধীরে শামীমের লোভ বাড়তে থাকে এবং সে এই কারখানাটির মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তখন উপাধ্যক্ষ হাবিব উল্লাহ কারখানাটি নিজের তত্বাবধানে নিতে চাইলে শামীম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ও কারখানায় হামলা করে এবং লুটপাট চালায়।

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্বদানকারী গৌরীপুর সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী গোলাম কারিমেল হাকিম মুনশী ও মোঃ আব্দুল কাদির জানান- শামীমকে স্যার দয়া করে গৌরীপুরে থাকতে দিয়েছিলেন। প্রথমে চাকরি ও পরে বিভিন্ন ব্যবসা গড়ে দিয়েছেন। স্যারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে তাঁর লোভ বেড়ে গিয়েছে, এখন কারখানা ও জমি দখলের পায়তারা করছে সে। যে কারণে স্যারের নামে উদ্ভট সব মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। শামীম ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয় পত্র বানিয়েছে, আমরা তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

অভিযোগের ব্যাপারে শামীম হোসেন বলেন- তাঁরা আমাকে গৌরীপুরে এনেছিলো লেখাপড়া করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে, কিন্তু তা না করিয়ে আমাকে শুধু নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করেছে। অবশেষে নিজের প্রচেষ্টায় সাফিনা সাইলেজ কারখানা গড়ে তুললাম, যার ট্রেডলাইসেন্স, বিদ্যুৎ বিলসহ যাবতীয় কাগজপত্র আমার নামে, এখন এটাও তাঁরা দখল করে নিয়েছে। আমার নামে একাধিক মামলা দায়ের করেছে, চেকের খালি পাতা ও মোটরসাইকেল কেড়ে নিয়েছে, তাই আমিও তাদের নামে মামলা দিয়েছি।

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও প্রশাসক এম সাজ্জাদুল হাসান জানান- মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর স্মারক লিপিটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও গৌরীপুর থানার পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করবে।