তপু সরকার হারুন : পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় (মেরিটাইম ইউনিট)। তিনি আমাদের শেরপুরের হিরন্বয় নায়ক খুরশেদ আলম (কালাভাই) । বর্তমান আর্ন্তজাতিক সামুদ্রিক কর্তৃপক্ষের সভাপতি।

বাংলাদেশ সমুদ্র নিয়ে গবেষনা করা অন্যতম ব্যক্তিত্ব। যার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে বঙ্গোপসাগরের মাঝে আরেকটি বাংলাদেশকে পেয়েছি। বাংলাদেশ মায়ানমার সমুদ্র সীমা নির্ধারনী ঐতিহাসিক রায় অর্জনে বিশেষ অবদান রাখায় হিরন্বয় নায়ক বলে আমরা শেরপুর বাসী গর্বিত । তিনি শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলার রানী শিমুলঁ ইউনিয়নের হাসঁধরা গ্রামের মরহুম আহসান আলী এবং মাতা মরহুমা হালিমা খাতুনের ছেলে। পরিবারের ৯ ভাই বোন এর মধ্যে তিনি ৫ম । বড় ভাই আব্দুল হালিম,সাবেক মহা পরিচালক, উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড। মাতা মোছাঃ হালিমা বেগম বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক রত্নগর্ভা সম্মানি ভাতা প্রাপ্ত।

শুরুতে, ১৯৫৩ সালে নিজ গ্রামে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার দুরে ভায়াডাঙ্গা বাজারের পাশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর লেখাপড়ার হাতে খড়ি।

অত্যন্ত মেধাবী খুরশেদ আলম কালা ভাই । শিক্ষাজীবনের শুরুতেই তাঁর মেধার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন। তার নিজ এলাকায় টেঙ্গড়পাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ।১৯৬৬ সালে জামালপুর থেকে জুনিয়র স্কুল বৃত্তি পরীক্ষা দেন । ১৯৬৮ সালে তিনি প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন । দেশপ্রেমের প্রবল টানে ঔ অঞ্চল থেকে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তিনি যোগদেন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে।

তিনি এ্যাক্টিং সাব লেফটেন্যান্ট হিসেবে যাত্রা শুরু হলো তাঁর। ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক গনঅভ্যুত্থানে তিনি পাকিস্তানে। সবেমাত্র কমিশন্ড লাভ করেছেন। ৭০/৭১ সালে পাকিস্তানে। ১৯৭৩ শেষদিকে ফিরে এলেন দেশে। প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্বেও যোগ দিতে পারেন নি মহান মুক্তিযুদ্ধে।

এ অতৃপ্তি তাঁকে আজীবন তাড়িয়েছে। ১৯৭৫ চলে গেলেন বিদেশি বন্দরে বিশেষ প্রশিক্ষণে ভারতের কোচিনস্থ ইন্ডিয়ান নেভাল একাডেমি থেকে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক জয় করে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করলেন।

দীর্ঘ প্রশিক্ষণে সর্ব ভারতে প্রথম স্থান অধিকার করলেন। আকাশবাণীতে খবর প্রচার হলো সকালে। এভাবে কেটেগেল অনেক বছর। তিনি পৃথিবীর বন্দরে বন্দরে ঘুরতেন আর দেশকে বাহি নৌবাহিনীর দায়িত্ব নিলেবস্থানে চলে গেলেন। তাঁর অবদানের স্বীকৃতি বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়ল উপমহাদেশ থেকে বিশ্বের অনেক দেশে। অহংকারে আমাদের বুক মন ভরে গেল।

দেশের জন্য প্রবল দায়বদ্ধতা নিয়ে তিনি এগিয়ে যেতে থাকলেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে । কোষ্টগার্ড, সমুদ্র মহড়ার নতুন ধারনা সহ একের পর এক সৃষ্টিধর্মী কাজ যুক্ত করতে থাকলেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ যতটুকু সমৃদ্ধ-সেখানে রয়েছে তার কৃতিত্ব এ সমুদ্র সারথি খুরশেদ আলম কালা সাহেবের।

২০১২ সালের মার্চে মায়ানমারের সাথে সমুদ্র বিরোধের ঐতিহাসিক রায় হয়েছে । সমুদ্র জয়ের নেপথ্য সারথি,নিবিড় -নিরলস পরিশ্রমি,উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান সমুদ্র ।

ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের রায়ে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব ঐতিহাসিক এক সফলতা অর্জন করেছে। রায়ে বিরোধপূর্ণ পঁচিশ হাজার ছয়শত দুই বর্গকিলো মিটার সমুদ্র এলাকার মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ঊনিশ হাজার চারশত সাতষট্টি বর্গকিলো মিটার। শতকরা ছিয়াত্তর দশমিক শুন্য চার ভাগ। এছাড়াও একলাখ আঠার হাজার আটশত তের বর্গকিলো মিটার টেরিটোরিয়াল সমুদ্র এলাকায় বাংলাদেশে নিরংকুশ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ মিয়ানমার সমুদ্রসীমায় ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ।

ওয়ান ইলেভেনের পরে দৃশ্যপট দ্রুত পাল্টাতে থাকল। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলো। কালাভাই তাঁর লেখায় যে বার্তাটি পৌছাতে চেষ্ঠা করলেন তা হলো- এখনই সমুদ্র নিয়ে না ভাবলে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। মহাজোট সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হলো সময় মতোই। তাঁকে সমুদ্রবিষয়ক অতিরিক্ত সচিবের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হলো। পরে একই বিষয়ের সচিব করা হলো। আমরা কাংক্ষিত ধারাবাহিক ফল লাভ করতে সক্ষম হলাম । সরকার তাঁর কাঙ্খিত পদমর্যাদা রিয়ার এডমিরাল(অব:) পদ ফিরিয়ে দিয়ে তাঁকে সম্মানিত করলেন । দেশ সম্মানিত হলো । আমরা গর্বিত হলাম। দেশের জন্য যথাযোগ্য কাজটি করতে পেরে তিনি অত্যন্ত গর্বিত। আমরা এ দেশপ্রেমিক বীরের দীর্ঘায়ু কামনা করি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম (কালা) আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক কর্তৃপক্ষের (আইএসএ) কাউন্সিলের ২৬তম অধিবেশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।

গত রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওই তথ্য জানানো হয়েছে। গত ১ অক্টোবর থেকে এটি কার্যকর ধরা হবে বলে জানানো হয়। এ নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হওয়া বাংলাদেশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন এবং গর্বের বিষয়।

উল্লেখ্য, বিগত বছরগুলোতে টানা আইএসএ’র সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৯-১২, ২০১৩-১৬ এবং ২০১৭-২০২০ সাল পর্যন্ত টানা সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে থাকার পর এবার সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হলো বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে ২০২১-২৪ সাল পর্যন্ত আবারও আইএসএ’র সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে বাংলাদেশ।

আইএসএ ১৯৯৪ সালে সমুদ্রসীমার আইন সম্পর্কিত জাতিসংঘের কনভেনশন অনুসারে প্রতিষ্ঠিত হয়। আইএসএর সদর দপ্তর জামাইকার কিংস্টনে।

এটি এমন একটি সংস্থা, যা সমগ্র মানবজাতির সুবিধার জন্য সমুদ্রে খনিজসম্পদ সম্পর্কিত সব কার্যক্রম সংগঠিত এবং নিয়ন্ত্রণ করে। এটি করার ফলে আইসএ’র গভীর সমুদ্রের তীরসংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে উদ্ভূত ক্ষতিকারক প্রভাবগুলো থেকে সামুদ্রিক পরিবেশের কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিত করে ।