আকাশ মার্মা মংসিং,বান্দরবান সংবাদদাতা : বান্দরবানের চিম্বুকে ম্রোদের নিজেদের চিরায়ত ভূমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে পাঁচতারা হোটেল ও পার্ক নির্মাণে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং ম্রো আদিবাসীদের সুরক্ষার আহ্বান জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুরের নিকট চিঠি দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন ‘এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল’।

২৩ নভেম্বর সোমবার সকালে সংগঠনটির দক্ষিণ এশিয়া শাখার প্রধান ওমর ওয়ারাইচ স্বাক্ষরিত চিঠিকে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানে চিম্বুকে ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণ ম্রো আদিবাসীদের তাদের চিরায়ত ভূমি থেকে থেকে উচ্ছেদ করবে।চিম্বুক ও থানচির রাস্তার ধারে নির্মিত হতে যাওয়া বিলাসবহুল এ ফাইভ স্টার হোটেল ম্রো আদিবাসীদের গ্রামগুলি নিশ্চিহ্ন করে দেবে, হাজার হাজার ম্রো উচ্ছেদ হবে এবং ম্রো আদিবাসীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, ঐতিহ্যবাহী ও সাংস্কৃতিক কাঠামো ধ্বংস করে দেবে।

হোটেলটি নির্মাণের ফলে এই অঞ্চলের ম্রো এবং অন্যান্য আদিবাসীদের পবিত্র স্থান, বন, জলের সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হবে বলেও চরম উদ্বেগ জানায় সংস্থাটি।

এই পরিস্থিতিতে আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা, তাদের নিজস্ব উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের পরিবর্তে পাঁচতারা হোটেল নির্মাণ সরকারের দায়িত্ব এবং প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন বলেও মনে করে সংগঠনটি।

উক্ত চিঠিতে আরও বলা হয়, হোটেল এবং পর্যটন স্থাপনার সাথে যুক্ত প্রকল্পগুলি ম্রো আদিবাসীদের প্রথাগত আইন-কানুন লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত কমপক্ষে ৮০০ একর জমি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দখল করতে পারে। এই পদক্ষেপ আইএলও আদিবাসী কনভেনশন, ১৯৫৭ এর আওতাধীন ‘এই জনগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, সম্পত্তি এবং শ্রম’ রক্ষার বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিকেও লঙ্ঘন করে।

এই কনভেনশনের ১১ অনুচ্ছেদে আরও বলা হয়েছে যে, ‘এইসব জনগোষ্ঠীসমূহ ঐতিহ্যগতভাবে ভোগদখল করে থাকেন এমন ভূমির উপর সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর সদস্যদের মালিকানার অধিকার, সমষ্টিগত বা ব্যক্তিগত অধিকার এর স্বীকৃতি দেওয়া হবে’ এবং ধারা ১৩ (২) এর বিধানে রয়েছে যে, ‘এরূপ জনগোষ্ঠীর সদস্যদের মালিকানাধীন ভূমির মালিকানা অথবা ব্যবহার সুরক্ষিত করার জন্য এই জনগোষ্ঠীর সদস্যদের পক্ষে এইসব প্রথার অথবা আইন-কানুন বোঝার অভাবের সুযোগ গ্রহণ থেকে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর সদস্য নয় এমন ব্যক্তিদের রোধ করার ব্যবস্থা করা হবে।’

‘তদুপরি আদিবাসীদের মালিকানাধীন ভূমির উপর হোটেল নির্মাণের উদ্যোগ “বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য আঞ্চলিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বিকাশ” এর প্রতি বাংলাদেশের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা লংঘন করবে।’

তাই অবিলম্বে চিম্বুক-থানচি রুটে বিলাসবহুল হোটেল নির্মাণ পরিত্যাগ করা এবং ম্রো আদিবাসীদের জমিতে কোনো নির্মাণ বা স্থাপনা তৈরী বা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আদিবাসীদের স্বাধীন ও পূর্বঅবহিত সম্মতির প্রতি সম্মান জানানো নিশ্চিত করতে; আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার আইনে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি অনুসারে আদিবাসীদের জীবন ও জীবিকা রক্ষা ও বিকাশ করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুরের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।