ফুলপুর প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের ফুলপুরে ঠাণ্ডাজনিত রোগে প্রতিদিন বয়স্ক ও শিশু রোগীদের ভীড় বাড়ছে। ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (হাসপাতালে) বর্তমানে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে ১৮০ থেকে ২২০ জন রোগী। যা হাসপাতালটির সক্ষমতার তিন-চার গুণ বেশী। তা ছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় নয় শত থেকে একহাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীগণ। আশপাশের চারপাঁচটি উপজেলার মানুষ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে আসেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকায় ও কিছু যন্ত্রপাতি সংযোজন না করার কারণে একদিকে চিকিৎসা যেমন ব্যাহত হচ্ছে, অন্য দিকে মূল্যমান যন্ত্রপাতি সংযোজনের আগেই বাক্সবন্দি অবস্থায় ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ছে। বাইরে পরিক্ষা নিরীক্ষা করাতে গিয়ে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশী অর্থ।

বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় বহিবিভাগে লম্বা লাইনের সারি। রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা ঠাণ্ডাজনিত সর্দি-জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, পেটেব্যাথাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করাতে এসেছেন। অন্তবিভাগেও বিছানা ছাড়াও মেজে ও বারান্দায় রোগিতে ঠাসা। হালুয়াঘাট উপজেলার সাখুয়াই গ্রাম থেকে ৩ মাসের মেয়ে শিশু তানিয়াকে ভর্তি করেছেন মিনুয়ারা খাতুন নামে এক মাতা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে নিউমোনিয়া আক্রান্ত মেয়েকে নিয়ে ফুলপুর হাসপাতালে ভর্তি আছি। সাথে শ্বাসকষ্টও হচ্ছে। ডায়রিয়া আক্রান্ত ছেলে নিয়ে এসেছেন সুফিয়া খাতুন নামে এক মা বলেন, আমার ছেলেটার দুই দিন ধরে ডায়রিয়া হয়েছে। এখানে এসে দেখি আমার মতো অনেকে তাদের সন্তানদের নিয়ে এসেছেন, বিছানা না পেয়ে বাসিন্দার মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। অনেক রোগী।

ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় পৌনে এককোটি টাকা দামের এক্স-রে যন্ত্রটি কয়েক বছর ধরে বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে। পড়ে থেকে তা যে কোন দিন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। দালালদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা। ফুলপুর হাসপাতালের আশপাশে প্রায় ৩০টি বিভিন্ন প্যাথলজি ক্লিনিক ও হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। যে গুলিতে চিকিৎসার মান নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। ফিরোজা খাতুন নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, আমার বোনকে ফুলপুর হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলাম বাচ্চা প্রসব করাতে। আমি একটু আমুয়াকান্দা বাজারে গিয়ে ছিলাম অনাগত বাচ্চার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু কেনাকাটা করতে। এসে দেখি আমার বোন হাসপাতালে নেই। খুঁজে বের করি, সে হাসপাতালের সামনে এক বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি। সেখানে রোগী ও তাদের স্বজনদের পকেট কেটে সব রেখে দেওয়া হয় বলে মন্তব্য করেন ফিরুজা খাতুন। তিনি আরো বলেন, দালাল ও মানহীন এইসমস্ত ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

media image
ছবি

ফুলপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আতাউল করিম রাসেল বলেন, অনেক আগেই আমরা ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে একশত শয্যায় উন্নত করার প্রস্তাব ঢাকায় পাঠিয়েছি। কেন যে এতো দিনে উক্ত প্রস্তাব পাশ হলো না তা বুঝতে পারছি না। ফুলপুর হাসপাতালে তারাকান্দা, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, নকলা ও ময়মনসিংহ সদরের কিছু এলাকার মানুষ ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করাতে আসেন। আমি মনে করি রোগী অনুযায়ী দুইশত শয্যা হলে ফুলপুর হাসপাতালে স্বাভাবিক চিকিৎসা করা সম্ভব হবে। তাই ফুলপুর হাসপাতালকে দুইশত শয্যায় উন্নত করায় হোক। ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, আমাদের হাসপাতালে রোগীর চাপ অনেক বেশী। প্রতিদিন প্রায় দেড়শ থেকে ২ শত রোগী ভর্তি থাকে। গড়ে ৮/৯ শত রোগী প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন। বর্তমান অবকাঠামোতে এই পরিমাণ রোগীর চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। আমি মনে করি একশত শয্যায় উন্নতি হলে ভালো হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাঃ মাহমুদুল হাসান আল ফারাবী (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, হাসপাতালের বর্তমান কাঠামো ৫০ শয্যার। জনবল, স্টাফ, ডায়েট সবকিছুই এই ৫০ শয্যার বিপরীতে বরাদ্দ। প্রায় প্রতিদিনই অন্তঃবিভাগে রোগী ভর্তি থাকে ১৫০ জনের উপরে। সীমিত লোকবল এবং বেডসংখ্যা দিয়ে এই বিশাল লোকসংখ্যাকে সেবা দিতে ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্টাফ হিমশিম খাচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন বহি:বিভাগে ৯০০-১০০০ রোগী হয়। সীমিত লোকবল দিয়ে এই বাড়তি চাপ সামলানো খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। আমি মনে করি হাসপাতালের বেড সংখ্যা বাড়ালে চিকিৎসা প্রত্যাশীগণ সেবা পেতে সুবিধা হবে। আশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে অবিলম্বে ৫০ থেকে ১ শত শয্যায় উন্নতি করে অত্র এলাকার মানুষের চিকিৎসার অসুবিধা দূর করবেন।