নিজস্ব প্রতিনিধি : জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব এবং বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্ট্রার কায়সার কামাল বলেছেন, বতর্মান সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে বাংলাদেশ মানুষ সন্দিহান হচ্ছে। দেশের প্রতিটি ক্রীয়াশীল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে যে জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সেই সনদ বতর্মানে উপস্থাপন করা হয়নি। আমরা এর নিন্দা, প্রতিবাদ জানাই। আমরা দেখেছি, শেখ হাসিনা জাতীকে প্রতারিত করেছিল, কিন্তু এখন দেখছি নতুন প্রতারকের জন্ম হয়েছে, এটা লজ্জাজনক। অবিলম্বে প্রতারণা বন্ধ করে জুলাই সনদে স্বাক্ষরিত সনদ যা প্রডিউস করা হয়েছিল তা জাতির সামনে উপস্থাপন করতে হবে। তিনি বলেন কারো কথায় ও পরামর্শে তা থেকে বেরিয়ে পড়বেন না। তিনি হুসিয়ারি উচ্চারণ করে আরো বলেন, যদি বেরিয়ে পড়েন তাহলে বাংলাদেশের মানুষ ছাড় দেয়, কিন্তু ছেড়ে দেবে না। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এর উৎকৃষ্ট নজির।

শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহ জেলা বারে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অডিটরিয়ামে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ব্যারিস্ট্রার কায়সার কামাল আরও বলেন, জুলাই সনদের কিছু অনুচ্ছেদ সংসদ নির্বাচনের পরে ২৬০ দিনের মধ্যে যদি সংবিধানে সন্নিবেশিত করা না হয়, তাহলে সেগুলো অটো সন্নিবেশিত হয়ে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোথাও এই ধরনের নজির নেই। এ সময় নির্বাচন প্রসঙ্গে বতর্মান অন্তবর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে কায়সার কামাল বলেন, বর্তমানে দেশে কোন গনতন্ত্রিক সরকার নেই। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে আমরা ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। ওই সংগ্রামে আমরা হারিয়েছি ভাই-বোন ও বন্ধুককে। বিগত জুলাই গনঅভ্যুত্থানে দুই হাজারের বেশি মানুষ জীবন দিয়েছে দেশে গনতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে।

আমরা মনে করেছিলাম ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বিদায়ের পর দেশ গনতান্ত্রিক সরকার পাবে। যে ভোটের জন্য মানুষ জীবন দিয়েছিল সেই ভোট অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু বতর্মান সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে বাংলাদেশ মানুষ সন্দিহান হচ্ছে। অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করুন। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের ঘোষনা দিয়ে জাতীকে ওয়াদা দিয়েছেন। আমরাও আশান্বিত হয়েছি, কিন্তু নির্বাচন নিয়ে জাতীর ভাগ্যকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা দেখছি। নির্বাচনের তারিখ নিয়ে তালবাহানা করলে আইনজীবী সমাজ মেনে নিবে না।

বতর্মান সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে উদ্দেশ্যে করে কায়সার কামাল বলেন, দেশের মানুষ আইনের শাসনে বিশ্বাসী কিন্তু বতর্মান আইন উপদেষ্টা মাঝে মাঝেই জুডিশিয়ারি বিষয় নিয়ে তীর্ঘক মন্তব্য করছেন। দেশের আইনজীবী সমাজ এটা ভালো ভাবে নিচ্ছে না, থামুন। না হলে আইনজীবী সমাজ রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে।

জুডিশিয়াল কমিশন গঠন প্রসঙ্গে এই আইনজীবী নেতা আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফায় বলা হয়েছে আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোটে বিএনপির সরকার গঠন করলে জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। তাই আইনজীবীদেরকে আগামী নির্বাচনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

এ সময় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট এনায়েতুর রহমানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আইনজীবি ফোরামের কেন্দ্রিয় কমিটির সহসভাপতি আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ আলী, সহিদুজ্জামান, আব্দুল্লাহ আল মাহবুব, সম্মেলন প্রস্তুতির কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মমরুজুল হাসান জুয়েল, আইনজীবী নেতা নূরুল হক, রেজাউল করিম চৌধুরী, মাসুদ তানভীর তান্না প্রমূখ।

প্রসঙ্গত, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ময়মনসিংহ জেলা বার ইউনিটে ৩০৭ জন সদস্য নিয়ে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে দুইজন আইনজীবী সদস্য মারা যাওয়া বতর্মান এই কাউন্সিল অধিবেশনের মোট ভোটার ৩০৫ জন। এর বিপরীতে দুইটি প্যানেলে ৫টি পদে স্বতন্ত্র ২ জনসহ মোট ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ রিপোর্ট লোখা পর্যন্ত ভোট গননা চলছে। এর আগে ব্যারিষ্টার কায়সার কামাল বেলুন উড়িয়ে সম্মেলন এর উদ্বোধন করেন। তিনি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অডিটরিয়ামে পৌছালে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দ তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ময়মনসিংহের সম্মেলনে

নির্বাচিতরা হলেন সভাপতি এডভোকেট নুরুল হক, সহসভাপতি এডভোকেট আকরাম হোসেন, সাধারন সম্পাদক এডভোকেট মাসুদ তানভীর তান্না, সহসম্পাদক এডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট ওসমান গনি মল্লিক মাখন ।