নিজস্ব প্রতিবেদক : ময়মনসিংহে পরিবহন সেক্টরে যাত্রীসেবার মান উন্নয়ন, যানজট নিরসন ও পরিবহন ব্যবসার উন্নয়ন শীর্ষক আলোচনা সভা করেছে সাধারন বাস মালিকরা। এতে জিলা মটর মালিক সমিতির নেতৃত্ব এবং বৈষম্যমূলক আচরণে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাস মালিকরা। এ সময় তারা সমিতির অতীত ঐতিহ্য ও সুনাম রক্ষায় পরিবহন ব্যবসার উন্নয়নের স্বার্থে নেতৃত্বের পরিবর্তনের দাবি জানান।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকাল ৩টায় ময়মনসিংহ নগরীর শাহজাহান সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় সংশ্লিষ্ট বাস মালিকরা এই ক্ষোভ অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

সভায় সাধারন বাস মালিক মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার একটি বাস ইউনাউটেড ব্যানারে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচল করতো, কিন্তু বর্তমান কমিটি আমার বাসটি সরিয়ে দিয়েছে। এতে আমার মত অনেক বাস মালিক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

এ সময় মালিক সমিতির প্রতি ক্ষোভ অসন্তোষ প্রকাশ করে মো: বিল্লাল হোসেন নামের এক বাস মালিক বলেন, মালিক হয়েও আমরা নির্যাতিত। সারাবছর সমিতিতে চাঁদা দিলেও আমাদের কোন কল্যান ফান্ড নেই। সভা না করে মন মত চলছে মালিক সমিতি। তারা চেয়ারে বসে নিজেদের ব্যবসার চিন্তা করলেও সাধারন বাস মালিকদের চিন্তা করছে না।

সভায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রায় ৭০টি বাস চলাচল করছে জানিয়ে পরিবহন ব্যবসায়ি গোলাম শাহরিয়ার শরীফ বলেন, জিলা মটর মালিক সমিতির অধিনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রায় ৭০টি বাস চলাচল করছে। এর মধ্যে মাত্র ২৩টি বাস ময়মনসিংহের মালিকদের, আর বাকি সব বাস ঢাকার মালিকদের। এটা অতীতে ছিল না, আমরা এই অবস্থার পরিত্রাণ চাই।

বাস মালিক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বর্তমান নেতৃত্বের কারণে ব্যবসা করতে পারছে না সাধারন বাস মালিকরা। শ্যামলাছায়া পরিবহন অবৈধভাবে দিনেরাতে চলছে। মানা হচ্ছে না নিয়ম, নীতি। এই অবস্থায় পরিবহন সেক্টরকে বাঁচাতে হলে মালিক বান্ধব ব্যবসায়ি নেতা এনামুল হক আকন্দ লিটনকে নেতৃত্ব আনতে হবে।

পরিবহন ব্যবসায়ি মো: ফখরুদ্দিন মুন্না বলেন, অযোগ্য নেতৃত্বে পরিবহন সেক্টরের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবসা করে আসা অভিজ্ঞ ব্যবসায়িরা এই কমিটিতে মূল্যায়ন পাচ্ছে না। যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে এই অবস্থার পরিত্রান দরকার।

এসব ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবহন ব্যবসায়ি ও গৌরীপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান তানজিল চৌধুরী লিলি। তিনি বলেন, যেকোন প্রতিষ্ঠানের জন্য যোগ্য অভিভাবক দরকার। সেই নেতৃত্ব আমাদের খোঁজে বের করতে হবে। আমরা মালিক বান্ধব সমিতি গড়তে চাই। এতে যেন কোন মালিক বা শ্রমিক হয়রানির শিকার না হয়। এ সময় বাস মালিকদের কাছ থেকে মাসিক চাঁদা গ্রহনের মাধ্যমে একটি কল্যান ফান্ড গঠনের দাবি জানান এই পরিবহন ব্যবসায়ি।

কোতোয়ালি কৃষকদলের সভাপতি ও বাস মালিক মাসুদুর রহমান নির্ভিক বলেন, বর্তমান সমিতির ব্যর্থতার কারণে সাধারন মালিকদের কথা শুনিছে না শ্রমিকরা। নিজেদের পছন্দমত কর্মচারি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এতে পরিবহন সেক্টরের অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ব্যবসায়িরা।

সাধারন বাস মালিকদের এসব বক্তব্যের প্রেক্ষিতে অনুষ্ঠানের সভাপতি ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক আকন্দ লিটন বলেন, নেতৃত্ব বড় কথা নয়, আমরা সাধারন মালিকদের কল্যাণে ইতিহাস সৃষ্টি করতে চাই। একজন সাধারন মালিক হিসাবে আপনাদের পাশে থাকতে চাই, নেতা হিসাবে নয়। তিনি আরও বলেন, অনেক বাস মালিক রোড পাচ্ছে না। এনিয়ে অনেকের মধ্যে ক্ষোভ অসন্তোষ বিরাজ করছে।

কিন্তু আমি মনে করি- বর্তমানে যারা মালিক সমিতির নেতৃত্বে আছেন, তারা সময় দিলে এই সমস্যা থাকবে না। আমরা চেষ্টা করব সাধারন মালিকদের ব্যবসায়িক উন্নয়নের স্বার্থে নতুন কোন সংগঠন করা যায় কী-না, তা আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে। সেই সঙ্গে জিলা মটর মালিক সমিতির অধিনে ঢাকার মালিকদের মাত্রাতিরিক্ত বাস চলাচলের বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সামাধানের চেষ্টা করব।

আলোচনা সভায় পরিবহন নেতা মো: রফিকুল আলম শামীমের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ি নেতা নাজিম উদ্দিন খান, তিতুমীর সরকার, খোরশেদ আলমসহ শতাধিক বাস মালিক।